“শান্তি, কোথায় শান্তি ? আমাদের দেশের জন্য , আমাদের সংসারের জন্য এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের হৃদয় এবং মনের জন্য ?” মানসিক যন্ত্রণার কান্নাধ্বনি যুগের পর যুগ ধরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে । এটা কি আপনার হৃদয়েরও কান্নাধ্বনি নয় ?
মানুষ এখন ক্লান্ত আর উদ্বিগ্ন । বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদের একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে পরিচালনা ও পরামর্শ, নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তার । আমাদের প্রয়োজন ও চাওয়া হচ্ছে মনের শান্তি ।
মনের শান্তি - এ এক অমূল্য সম্পদ । দ্বন্দ্ব ও হতাশা, অজস্র বিক্ষোভে অস্থিরতায় ভরা এই পৃথিবীতে এই সম্পদ পাওয়া কি সত্যিই সম্ভব ?
ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে ! অজস্র মানুষ সুনাম ও সৌভাগ্য, ক্ষমতা ও সন্তুষ্টি, শিক্ষা ও জ্ঞানে, মানবিক সম্পর্ক এবং বিয়ের মধ্য দিয়ে শান্তি খুঁজছে । তারা তাদের মাথা জ্ঞান দিয়ে বোঝাই করে, টাকা - পয়সা রোজগার করে সম্পদশালী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু তাদের প্রাণের শূন্যতা থেকেই যায় । আবার অনেকে জীবনের বাস্তবতা থেকে পালিয়ে থাকতে বিভিন্ন নেশা ও পানীয়তে আসক্ত হয়, কিন্তু যে শান্তি তারা খোঁজে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ, নিরাশায় ভরা ভুল শুধু ভুলই হয় ! এই অশান্ত পৃথিবীতে অশান্ত মন নিয়ে তারা শূন্যতা আর একাকিত্বেই থাকে ।
অশান্ত মানুষ
ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করে তাকে একটা সুন্দর বাগানের মধ্যে রাখলেন যেন মানুষ প্রকৃত শান্তি, আনন্দ এবং সুখভোগ করতে পারে ।
কিন্তু আদম ও হবা অবাধ্য হল, আর সাথে সাথে তাদের ভেতরে দোষীভাব প্রকাশ পেল । যেখানে তাঁরা ঈশ্বরের উপস্থিতির জন্য গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করত; এখন তাঁরা লজ্জায় নিজেদের লুকালো । যে সুখ ও শান্তি তাঁরা জেনেছিল, তার জায়গায় দোষীভাব আর ভয় স্থান পেল । এখানেই শুরু হল পৃথিবীর সকল অশান্তি আর মানুষের মনের অশান্তি । যদিও আমাদের প্রাণ ঈশ্বরের প্রতীক্ষা করে , তবুও আমাদের পাপময় স্বভাব তাঁর পন্থাসকলের বিরুদ্ধাচরণ করে । এই অন্তরের দ্বন্দ্ব উৎকণ্ঠা ও দুর্দশার কারণ স্বরূপ হয় । আদম ও হবার মতই আমরা যখন আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাতে আত্ম - কেন্দ্রিক হই আমরা তখন উদ্বিগ্ন ও অসন্তুষ্ট হই । জীবনের অনিশ্চয়তা ও পরিবর্তন, ক্ষয়িষ্ণু জগৎ আপনার নিরাপত্তাকে নড়বড়ে করে দেয় এবং আমাদের শান্তি বিঘ্নিত হয় ।
যদিও আপনি এটাকে সনাক্ত করতে বা স্বীকার করতে নাও পারেন , আপনার অস্বস্তির কারণ পাপও হতে পারে । বহু লোক শান্তি পেতে বাহ্যিক ও পার্থিব বিষয়ের অনুসন্ধান করে । তাদের অস্থির মনের জন্য অস্থির জগৎকে তারা দোষ দেয় । কিন্তু তারা তাদের নিজেদের অন্তর দেখতে ব্যর্থ হয় ।
শান্তিরাজ যীশু খ্রীষ্ট
জীবনের সমস্ত বিষয় সেই পবিত্রতমের সঙ্গে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমন্বয় হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আসতে পারে না যিনি আমাদের নির্মাতা ও আমাদের বোঝেন । এটা খ্রীষ্টের কাছে সমর্পণের দ্বারাই একমাত্র সম্ভব । তিনি জগতের কেবলমাত্র মালিকই নন কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিষয়ই চিন্তা করছিলেন যখন তিনি “যাহারা অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়ায় বসিয়া আছে তাহাদের উপরে দীপ্তি দিবার জন্য , আমাদের চরণ শান্তি পথে চালাইবার জন্য “ ( লূক ১ : ৭৯ ) জগতে এসেছিলেন ।
যীশু অন্ধকারে দীপ্তি, বিবাদে শান্তি , বেদনায় আনন্দ, হতাশায় আশা এবং মৃত্যুতে জীবন প্রদান করেন । যোহন ১৪ : ২৭ পদে তিনি বলেন, “ শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি ; …….. তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ভীতও না হউক ।”
অনুতাপ ও পাপ স্বীকার মনের শান্তি আনে
অতএব আপনি যখন অনুভব করেন পাপের বিরাট বোঝা আপনাকে নিচের দিকে টেনে নামাচ্ছে, তখন তার প্রতিকার হল প্রেরিত ৩ : ১৯ । “অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির, যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয় ।”
যীশু এই সবচেয়ে অর্থপূর্ণ, জীবন পরিবর্তনকারী অভিজ্ঞতা লাভের জন্য আপনাকে এই বলে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, “ হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব” ( মথি ১১ : ২৮ ) । ১ যোহন ১ : ৯ প্রতিজ্ঞা করে, “ যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন ।” আপনি কি তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন ?
আপনি যখন যীশুর কাছে আসেন , আপনি তখন ক্ষমা ও স্বাধীনতা পাবেন । অপমানবোধ ও ক্ষমাহীনতার পরিবর্তে, আপনার হৃদয় ভালবাসা ও দয়ায় পূর্ণ হয় । আপনার হৃদয়ে যীশু রাজত্ব করলে আপনি আপনার শত্রুদের ভালবাসবেন ।
চিরস্থায়ী শান্তি
একজন খ্রীষ্টীয়ান হিসেবে , ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং তাঁর যত্নে নির্ভর করাই হল ভয় ও উদ্বেগের প্রতিষেধক । কতখানি প্রশান্তিময় এক অপরিবর্তনীয় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা যিনি অনন্তকাল থেকে অনন্তকাল আছেন । তিনি আমাদের ভালবাসেন এবং সর্বদাই আমাদের জন্য চিন্তা করেন । তাহলে কেন দুশ্চিন্তা এবং অসন্তোষ ? ১ পিতর ৫ : ৭ পড়তে পড়তে আমরা এ কাজ করাটা শিখতে পারি, “ তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দাও ; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন ।” আমাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও আছে, “যাহার মন তোমাতে সুস্থির , তুমি তাহাকে শান্তিতে , শান্তিতেই রাখিবে, কেননা তোমাতেই তাহার নির্ভর “ ( যিশাইয় ২৬ : ৩ ) ।
যখন আপনি যীশু খ্রীষ্টের কাছে আপনার সম্পূর্ণ হৃদয় নিয়ে আসবেন, তখন আপনার মনের শান্তি খোঁজা শেষ হয়ে যাবে । কারণ, তিনিই আপনাকে শান্তি ও স্থিরতা দেবেন , যা শুধু তাঁর উপরে নির্ভর করেই পাওয়া যায় । আর তখন কবির সাথে আপনিও বলতে পারবেনঃ
যেখানে শান্তি নেই, সেখানেও আছে এক শান্তি,
ঝোড়ো বাতাসের প্রবাহ যেখানে, সেখানেও আছে প্রশান্তি ,
নিরালায়া সামনা - সামনি সেখানে মিলিত হই
আমার প্রভুর সাথে আমি যদি চাই ।
-রালফ স্প্যাডিং কুশম্যান
অশান্ত এই পৃথিবীতে আপনিও মনের শান্তি পেতে পারেন । খ্রীষ্টের কাছে এখনই আপনার হৃদয়ের দরজা খুলে দিন - এবং তারপর তিনি কোন একদিন আপনার জন্য স্বর্গের দরজা খুলে দেবেন, যেখানে সত্যিকার শান্তি রাজত্ব করে এবং যা কখনও শেষ হয় না ।