ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে শয়তানের কৌশল বুঝতে পারা
পবিত্র বাইবেলের উদ্দেশ্য শয়তান ও তার কাজকর্মের দিকে দৃষ্টি রাখা নয় । তা সত্বেও, বাইবেলে আমরা এমন অনেক কিছু পাই যা তার বৈশিষ্ট্য ও কাজের বিষয় প্রকাশ করেছে।
শয়তান এক সময় ছিল একজন স্বর্গদূত, কিন্তু সে তার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের বিপক্ষে গেল এবং তাঁর ( ঈশ্বরের ) মত হতে চাইল । অন্ধকার রাজ্যে শয়তানের কৃত কাজগুলো নতুন নয়। যুগের পর যুগ ধরে ঈশ্বরের রাজ্যের বিপক্ষতা করাই তার কাজ এবং সেগুলোই হচ্ছে তার চেষ্টার নমুনা । ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যা কিছু সম্পাদন করে থাকেন, শয়তান ঠিক তার বিকল্প কাজটাই করে থাকে।
যাত্রাপুস্তকে আমরা মিসরীয় যাদুকরদের আশ্চর্য কাজ করার ক্ষমতা সম্পর্কে পড়ি, যারা ঈশ্বর কর্তৃক মোশির মধ্য দিয়ে করা আশ্চর্য কাজের অনুরূপ করতে চেষ্টা করেছিল। ইয়োব পুস্তকে, ইয়োবকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত দেখে শয়তান নিজেকে প্রচন্ড হিংসাতুর বলে প্রকাশ করেছিল । ইয়োবকে ঈশ্বরের কাছ থেকে জোর করে সরিয়ে আনার জন্য সে তাকে বঞ্চিত করে তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছিল ।
শয়তানের পদ্ধতিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ ভয়, হুমকি, ক্ষমতা বা সুখভোগের প্রতিজ্ঞা, সন্দেহ সৃষ্টি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করা । প্রথম যে সব বিষয় সে আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় তা খুবই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর । তার পরামর্শ হচ্ছে, “আপনি কি ভবিষ্যত জানতে চান, অথবা অন্যদের যা নাই তেমন দূরদৃষ্টি পেতে চান ?” সে এমন প্রতিকার করার শক্তি দিতে চাইবে যা বিজ্ঞান জগতের আওতার বাইরে । ভাগ্য গোনা বা জ্যোতিষ শাস্ত্র বেশ নির্দোষ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু চটজলদি তার পিছনে কিছু যাদুকরি শব্দ বা সূত্র, বিশেষ দিন পালন করা এবং অমঙ্গলসূচক কোন সংখ্যা বা দিনকে ভয় পাওয়ার বিষয় চলে আসে । মাথার মধ্যে এসে ঢোকে , কিছু কিছু আত্মাকে সম্মান করতে হবে এবং ভয় করতে হবে, কারণ সেগুলো আমাদের উপর প্রভাব খাটাতে পারে । এইভাবে শয়তান অসতর্কদের ফাঁদে ফেলে এবং তাকে আর তার আত্মাদের ভয় করতে বাধ্য করে ।
বেশ অনেক লোকই কোন কোন বিষয়ের প্রতি কৌতুহলী হয়ে তার ফাঁদে পা দিয়েছে, যা প্রথমতঃ নির্দোষ বলেই মনে হবে । কিন্তু ভাগ্য গণনা করার বোর্ড, রাশিচক্র, হস্তরেখা এবং এরকম বিভিন্ন অভ্যাসগুলো তাদেরকে মন্দ আত্মাদের কাছে পরবর্তীতে মানসিকভাবে আরও দুর্বল বলে প্রমাণ করে দেয় ।
শয়তানের লক্ষ্য হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি খ্রীষ্টিয়ানদের বিশ্বাস ক্ষয় করে ফেলা এবং অবশেষে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা । আর খ্রীষ্টিয়ানেরা একমাত্র খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসেই বিজয় লাভের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে । অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা অথবা ক্ষমতার লালসা অনেক সময় কোন কিছুর প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে আকর্ষিত করতে পারে, যা আসলে শয়তানের জগতের বিষয় । ঈশ্বরের প্রতি সহজ - সরল বিশ্বাসে অজানা বিষয়েও অবিচলিত একজন শুধুমাত্র খ্রীষ্টের শক্তিতেই পূর্ণভাবে সাহসী থাকতে পারে ।
কৌতূহল থেকে অথবা পরীক্ষামূলকভাবে যেটা নাকি শুরু, তা খুব তাড়াতাড়ি একজনকে ভয়ের জালে জড়িয়ে ফাঁদে আটকে ফেলে ; কি হবে না হবে সেই ভয়, বড় বড় শক্তিগুলোর প্রতি ভয় , অন্য লোকদের প্রতি ভয়, এবং শয়তানের প্রতি ভয় তৈরি হয় । যে নিজেকে অনিশ্চিতভাবে জড়িয়ে থাকাটা মেনে নেয় ; এইসব ভয়গুলো তার জীবনকে ঘিরে ফেলে । এই ভয়ের প্রতি উত্তরে শয়তান তার কাছে প্রতিষেধক আছে বলে দাবি করে । যদি কেউ তার অধীনতা মেনে নিয়ে তার কৃত অনুষ্ঠান পালন করে অথবা, তার অন্যান্য বিষয় সমূহ মেনে চলে, তাহলে সে তো আরও ক্ষমতা দেবার কথা বলে । অন্য আত্মাদের প্রতি ভয় আরও শক্তিশালী ক্ষমতা দিয়ে আমরা জয় করতে পারব । এইভাবে একজন ব্যক্তি একের পর এক শক্তির বিভিন্ন মাত্রার সাথে পরিচিত হয় যেন তার মধ্যে দিয়ে সে বড় মাপের শান্তি পাবার চেয়ে বরং সে কখনও শয়তানের ঘৃণাঢ় কর্মকাণ্ডের পেঁচানো গভীরতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না । শয়তানের দেওয়া নিরাপত্তা চাতুরি বলেই প্রমাণিত, যার পরিবর্তে আরও বড় কোন অপ শক্তির নিরাপত্তা প্রয়োজন মনে হয় । এটাই হচ্ছে শয়তানের শয়তানি পদ্ধতি ।
শয়তানের পরিকল্পনা হচ্ছে কৌশলে ঈশ্বরকে অধিকাচ্যুত করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা । শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য, উপাসনা পাবার জন্য নয় । সে তো আর সর্ব ক্ষমতার অধিকারী নয় ; সে ঈশ্বরের পুত্র যীশুর ক্ষমতার উপরে যেতে পারে না ; সে নিরাপত্তা দিতে পারে না ; সে আমাদের মঙ্গলের ব্যাপারেও আগ্রহী নয় । তা সত্ত্বেও সে সবসময় লোকদের তার পক্ষে টেনে আনতে বাধ্য করতেই তার কাজ করে যাচ্ছে । সে তো ঈশ্বর ও তাঁর রাজ্যের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে । নিজেকে প্রভু হিসেবে মনে করে সে তার অধীনে একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী । ভয় ও ক্ষমতার মোহে এটা গঠন করতে সে তৎপর । ( ২ করিন্থীয় ১১ : ১৪ , ১৫ পদ ) । এই রকম রীতি-নীতির ফলে ব্যক্তি জীবনে , পারিবারের জীবনে এবং সরকারি কাজে শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট হয় । এভাবে সে লোকদের বলপূর্বক দখল করে , কিন্তু এই জাল থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে তাদের গুরুতর ভাবে হুমকির সামনে পড়তে হয় ।
শয়তান হচ্ছে আপনার ভীষণ রকম কটু, ভীষণ রকম বিদ্বেষ পরায়ণ, ভীষণ রকম দুশ্চরিত্র, ভীষণ রকম ভয়ংকর এক শত্রু । সে এমন একজন যার একেবারে সম্মান নেই । সে একজন মিথ্যাবাদী । তার মধ্যে কোন সত্য নেই - “কারণ সে মিথ্যাবাদী আর সমস্ত মিথ্যার জন্ম তার মধ্য থেকেই হয়েছে” ( যোহন ৮ : ৪৪ পদ ) । সে একজন খুনি, একজন ধ্বংসকারী । সে সব রকম মন্দ ও ঘৃণার প্রতিমূর্তি । সে সব দিকেই সম্পূর্ণভাবে দুষ্ট , যার মধ্যে বলার মত ভাল কিছুই নেই ।
শয়তান হচ্ছে সমস্ত মন্দতার প্ররোচনাকারী । এমন কোন দুষ্কর্ম, এমন কোন ভীষন পাপ অথবা এমন কোন নোংরামি নাই যা তার পক্ষে করা অসম্ভব । সকল রকম ঘৃণা, সকল খুন , সকল রকম শিশু অথবা স্ত্রীদের উপরে অপব্যবহার কারী, সকল রকম নেশা শক্তি, সকল রকম অনৈতিকতা, সকল পরিবারের ধ্বংসকারী, সকল রকম কলহ সৃষ্টিকারী, সকল রকম ডাইনী বিদ্যা , সকল রকম অসাধুতার মূলে সে - ই রয়েছে। মন্দতা এবং অপরাধের আবেগে, বিকৃত মানুষের হাতে অথবা দুশ্চরিত্র ব্যক্তির হাতে পড়া নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটলে সে আহ্লাদ করে। সে নির্মম এবং ক্ষমা হীন । কষ্ট বা অত্যাচারে তার মধ্যে সহানুভূতি সৃষ্টি করে না। তার চুড়ান্ত লাভের জন্য মৃত্যু ও রক্তপাত সে তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে । সে এসেছে, “ চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়ে “ ( যোহন ১০ : ১০ পদ ) ।
শয়তানের অনন্তকালীন স্থান আগেই স্থির হয়ে আছে । তার এবং তার দূতদের জন্য অনন্তকালীন আগুনের স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে ( মথি ২৫ : ৪১ পদ ) । যত বেশি সংখ্যক লোককে সে তার সাথে সেই যন্ত্রনার স্থানে নিয়ে যন্ত্রণা দিতে পারে ততই তার মজা । সে জানে, সে তা করতে পারে যদি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্যকে নষ্ট করতে পারে এবং আমাদের বিশ্বাসকে চিরতরে ধ্বংস করতে পারে । হয় সে তা করে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি খোলামেলা চ্যালেঞ্জ দিয়ে, অথবা খ্রীষ্টিয় ধর্মে থেকেও না গরম না ঠান্ডা, অসতর্ক ও নামমাত্র খ্রীষ্টিয়ানদের সূক্ষ্মভাবে উৎসাহিত করে ।
শয়তানের থাবার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । কিন্তু সে আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করাতে চায় যে এখান থেকে বের হয়ে আসা যায় না । পবিত্র বাইবেল আমাদের বলেছে, যীশু এরকম বন্দীদের মুক্ত করতে এসেছেন । তিনি জীবন দিতে এসেছেন । যীশু হচ্ছেন পথ ও সত্য ও জীবন ( যোহন ১৪ : ৬ পদ ) । এই পৃথিবীতে যীশু তাঁর জীবনকালে তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করে শয়তানের প্রলোভন প্রতিরোধ করেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা মন্দ আত্মাদের তাড়িয়ে দেন । ( মথি ৪ : ১ - ১১; মার্ক ৯ : ২৫, ২৬ পদ ) । তারপর, যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করে ও মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠে শয়তানের ক্ষমতার উপরে বিজয়ী হয়েছেন ।
আমরাও কি এই বিজয় লাভের সুযোগ গ্রহণ করতে পারি না এবং আমাদের প্রাণের সবচেয়ে বড় শত্রুর উপরে বিজয়ী হতে পারি না ? প্রথমত, আমাদের বুঝতে হবে, আমরা শয়তানের হাতে ধরা পড়ে এবং তার দ্বারা ভয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছি । আমাদের স্বীকার করতে হবে এটা হচ্ছে পাপ এবং যদি এই অবস্থায় থাকি তাহলে আমরা তো হারিয়ে গেছি । যেহেতু আমরা বুঝতে পারছি, আমরা শয়তানের খপ্পর থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারি না, সেহেতু মুক্ত হবার জন্য আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করতে হবে । আমাদের অনুতাপ করতে হবে এবং আমাদের পাপসমূহ থেকে ফিরেতে হবে। আমাদের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত দানকারী যীশুর রক্ত বিশ্বাসে গ্রহণ করা প্রয়োজন । আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত হতে হবে, তাঁর ক্ষমা গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্বস্তভাবে তাঁর বাক্য মানতে হবে । এই সব শর্ত পূরণ করতে পারলে তিনি তাঁর শান্তি আমাদের দেবেন, দেবেন আমাদের নতুন স্বভাব এবং তাঁর সন্তান হিসেবে আমাদের গ্রহণ করবেন । এরই মানে হচ্ছে নতুন জন্ম লাভ করা । যে কেউ ঈশ্বরের আহ্বান প্রতিরোধ করে সে তো এখনও শয়তানের রাজ্যে রয়ে গেছে, এবং পরিণামে এই প্রবঞ্চক তার সাথে তাকে চিরকালের যন্ত্রণা স্থানে নিয়ে যাবে ।
আপনি যদি আপনার জন্য ঈশ্বরের দেওয়া পরিকল্পনা বুঝতে না পারেন, তাহলে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন , সরল অন্তরে তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেবেন । ঈশ্বর আপনাকে তাঁর কাছে ডাকছেন এবং চাচ্ছেন যেন আপনি শয়তানের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসেন । ঈশ্বর আপনাকে আশীর্বাদ করুন । গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায়টি পাঠ করুন ।
লুক ১১ : ২০ - ২৩ পদ ……শয়তানের চেয়ে বলবান
রোমীয় ৬ : ২০ - ২৩ পদ …..পাপের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া
যিশাইয় ৬১ : ১ পদ ……. বন্দিদের কাছে স্বাধীনতা
রোমীয় ৮ : ১, ২ পদ …. পাপ ও মৃত্যুর নিয়ম থেকে মুক্ত হওয়া