“তুমি অন্তরের মধ্যে সত্য দেখতে চাও , “ ( গীত সংহিতা ৫১ : ৬ ক পদ )
জীবনের সকল স্তরেই সত্যবাদিতা নৈতিক সদগুনের সাথে সম্পর্কযুক্ত । সততা সত্যিকারেরই হৃদয় ঘঠিত ব্যাপার । সততা যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচারের মূলনীতি । আমাদের হৃদয়ের চিন্তা এবং ইচ্ছা, সবই ঈশ্বর জানেন । তিনি সত্যকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসাবে বিবেচনা করেন, কারন তিনি হচ্ছেন সত্যের ঈশ্বর । ( দ্বিতীয় বিবরণ ৩২ : ৪ পদ ) । ঈশ্বর আমাদের পরিপূর্ণ সততাকে অবশ্যই আশীর্বাদ করে থাকেন ।
যখন আপনার দোষ ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন আপনি সত্য কথা বলেন ; আর যখন কেউ জানবে না, তখন কি আপনি সৎ হতে পারেন ?
আপনি কি জেনে - শুনে কাউকে কাউকে মিথ্যা ধারণা দিয়ে থাকেন ?
আপনি কি ঋণ করে কিছু কেনেন , যখন আপনি জানেন যে আপনার পরিশোধ করার ক্ষমতা নাই ?
প্রার্থনার সময় আপনি কি ঈশ্বরের কাছে সত্য কথা বলেন ?
আপনার জানা মতে ঈশ্বর যা চান, অত্যন্ত সৎ ভাবে আপনি কি তার সবকিছু পালন করেন ?
আপনি কি বাইবেলের শিক্ষা সম্পর্কে সৎ ?
আপনি কি এমন একজন , যে সৎ লোক সাজার ভান করেন ?
বাইবেলের নতুন নিয়মে লেখা অননিয় এবং তার স্ত্রী সাফিরার ঘটনা আমাদের বেশ প্রভাবিত করে । অন্য অনেকের মত তারাও জমি বিক্রি করেছিল । তারা তাদের জমি বিক্রি টাকার অংশ গোপনে রেখে দিয়েছিল, কিন্তু গির্জার প্রধানদের কাছে এমন ভাব প্রকাশ করেছিল যে, জমি বিক্রির সব টাকাই তারা দিয়ে দিচ্ছে । অননিয় ও সাফিরা গির্জার প্রধানদের কাছে টাকা নিয়ে এসে বলেছিল, তারা ঐ টাকাতেই জমি বিক্রি করেছে । ঈশ্বর তখনই মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তাদের অসাধুতার বিচার করেছিলেন । ঐ সময় প্রাচীন মন্ডলিতে ( গির্জাতে ) ভন্ডামী অথবা অসাধুতা মারাত্মক শাস্তি যোগ্য ছিল । এই ধরনের মিথ্যাচার ঈশ্বর গুরুত্ব দিয়ে দেখেন । আমরা হয়তো অননিয় ও সাফিয়ার মতন ভুল ধারণা দিই , যদিও আমরা যা বলি তা মিথ্যা নয় । ঈশ্বরের কাছে কৈফিয়ত দেবার কথা আমরা ভুলে যেতে চাই । কিন্তু ঈশ্বর আমাদের অন্তর জানেন এবং পরিপূর্ণ সততা আশা করেন ।
একজন ভন্ড লোক, সে যা নয়, তা হবার ভান করে । সে দাবি করে যে সে সত্যবাদী , কিন্তু যখন তার লাভের জন্য আসল সত্যকে গোপন করে, তখন সততার কথা সে ভুলে যায় । হতভাগ্য লোকদের অভাবের কথা সে হয়তো বলে , কিন্তু দুর্যোগ মুহূর্তে সে মোটেই তার সম্পদ বা সময় ব্যয় করার চিন্তা করে না । অনেকে তার প্রতিবেশীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশের ভান করে, তবুও সেই প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলতে তাদের এতটুকু বাঁধে না । একজন লোক নিজেকে খুব সাধু হিসেবে দেখায়, কিন্তু ধরা না পড়া পর্যন্ত সে টাকা চুরি করতে থাকে । কেউ হয়তো মনে করে সে অন্য অনেকের চেয়ে ভদ্র ও সভ্য আচরণ করতে চেষ্টা করছে , কিন্তু বাস্তবে প্রতারণাই করছে । এই আলোচনা অনুসারে এই ধরনের লোকদের ভন্ড ও অসাধু বলা যায় ।
মানুষের ভন্ডামী সব সময় ঈশ্বরকে দুঃখ দেয় । যীশু বলেছেন, “ এই লোকেরা মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে,” ( মথি ১৫ : ৮ পদ ) । মুখ আর অন্তর এক করা মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর প্রচেষ্টা । আমাদের অন্তরের গভীর সততাই হল ঈশ্বরের দয়া ও অনুগ্রহ পাবার উপায় ।
একজন সত্যিকার খ্রীষ্টিয়ান সততার উদাহরণ । ঈশ্বরের সাথে সরাসরি সৎ মনোভাব বজায় রাখার মাধ্যমে সে আত্মিকভাবে উন্নতি করে । সব লোকদের সাথে সৎ মনোভাব সযত্নে রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কথা - বার্তায়, বা কোন ব্যবসায়ী লেনদেনেও একে অন্যের সাথে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা উচিত । সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই আমাদের এসব করতে হবে এবং পরিষ্কার বিবেকে যে কোন আত্মত্যাগও করতে ইচ্ছুক থাকতে হবে ।
গল্পের মধ্যে দিয়ে আমরা একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি । একদিন একজন শিক্ষিকা তার এক ছাত্রকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ তিন টাকা দিলে কি তুমি একটা মিথ্যা কথা বলবে ?’
‘ না, দিদিমনি ।’ ছেলেটি বলল ।
‘ দশ টাকা দিলে কি তুমি একটা মিথ্যা কথা বলতে পারবে ?’
‘না , দিদিমনি, না ।’
দিদিমণি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, পঞ্চাশ টাকার জন্যও কি তুমি একটা মিথ্যা কথা বলবে না ?’
ছেলেটি উত্তর দিল, দিদিমণি , না ।’
এবার শিক্ষিকা আবারও প্রশ্ন করলেন, ‘এক হাজার টাকার জন্যও কি তুমি একটা মিথ্যা বলবে না ?’
ছেলেটি মনে মনে ভাবল, - এক হাজার টাকা দিয়ে তো আমি অনেক কিছু করতে পারি । তাই সে আমতা আমতা করে বলতে চেষ্টা করল, ‘ আমি, মানে ………।’
ছেলেটি যখন ইতস্তত করছে এমন সময় পেছন থেকে আর একটা ছেলে বলে উঠল , ‘না - না, দিদিমণি । এক হাজার টাকা দিলেও মিথ্যা কথা বলা যাবে না ।
‘ না, কেন ?’ শিক্ষিকা প্রশ্ন করলেন ।
ছেলেটি সাথে সাথে উত্তর দিল, কারণ মিথ্যাটাই থেকে যাবে । এক হাজার টাকা দিয়ে কেনা ভাল ভাল জিনিস শেষ হয়ে গেলেও মিথ্যাটা আগের মতই থেকে যাবে ।
সত্য এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের অনেক সময় এই সত্যের জন্য ঝামেলায় পড়তে ইচ্ছুক থাকতে হবে । মুহূর্তের ঝামেলার হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়, যেন আমরা আমাদের সততা রক্ষা করতে পারি । অসৎভাবে উপার্জিত টাকা অপবিত্র বিবেকের কাছে ও ঈশ্বরের অনন্ত বিচারের কাছে মূল্যহীন ।
তাহলে, আপনি কি এ কথা বলতে পারেন যে , আপনি ঈশ্বরের আলোতে পথ চলছেন এবং একই ভাবে অসৎ কাজও করে চলছেন ? যেমন ,
আপনার ভাই বা বোনকে ক্ষমা করতে পারছেন না ?
কারো সাথে অন্যায় করেও তার সংশোধন করছেন না ?
সত্যকে অতিরিক্ত বাড়িয়ে তোলেন ?
প্রতিজ্ঞা ভাঙতে এতটুকু ইতস্তত করেন না ?
দশমাংশ ও উপহারে ঈশ্বরকে ঠকাচ্ছেন ?
সততা হচ্ছে আমাদের চরিত্রকে যাচাই করার উপায় । ঈশ্বর আমাদের অন্তর জানেন এবং কোন কিছুই তাঁর কাছ থেকে লুকানো নয় । অনেক সময় আমরা তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখি না , তবুও তিনি আমাদের জানেন এবং তার আমরা হৃদয়ে অনুভবও করি । অনেক সময় লোকজনের কাছে আমরা আমাদের সৎ ও বিশ্বস্ততার স্বরূপ প্রকাশ করি না । সত্যিকার সুখী হচ্ছেন তিনিই , যিনি ঈশ্বরের সাথে সৎ সম্পর্ক রাখেন এবং নিজেকে যা ঠিক, তাই - ই ভাবেন এবং অন্যের কাছেও সঠিকভাবে নিজের পরিচয় দেন । যখন আমরা ঈশ্বরের কাছে আমাদের হৃদয় ও জীবন খুলে দেব, তখন এইসব বিষয়গুলির সমাধান হবে ।
আমাদের উদ্দেশ্য ও মনোভাবসমূহ সততার পরীক্ষার কাছে সমর্পণ করতে হবে । ঈশ্বর ও মানুষের সাথে আচরণের কাছে সমর্পণ করতে হবে । ঈশ্বর ও মানুষের সাথে আচরণের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজন আমাদের অন্তরের পরিবর্তন । কারণ আমাদের অন্তরের চেহারার হুবহু রূপ বাইরে ফুটে ওঠে । আপনি কি একজন সৎ বা খাঁটি লোক ? এটা অবশ্যই ঈশ্বর চান, এবং জগৎ তাই - ই আশা করে, আর এ থেকে আমাদের উপকারও হয় । সৎ জীবনই আমাদের জন্য একমাত্র জীবন যা সকলকেই উপকৃত করে । “ সব বিষয়ে আমরা ভালভাবে চলতে চাই বলে আমরা জানি যে, আমাদের বিবেক পরিষ্কার ।” ( ইব্রীয় ১৩ : ১৮ খ পদ ) । “মন্দের বদলে কারও মন্দ করো না । সমস্ত লোকের চোখে যা ভাল সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও ।” ( রোমীয় ১২ : ১৭ পদ ) । এছাড়াও, লেবীয় ১৯ : ৩৫ - ৩৬ এবং হিতোপদেশ ১৯ : ৫ পদ পড়তে অনুরোধ করছি ।
( সমস্ত বাইবেলের পদগুলি চলতি ভাষার অনুবাদ থেকে নেওয়া )