“পরে লোকেরা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল যেন তিনি তাদের উপর হাত রাখেন । কিন্তু শিষ্যেরা সেই লোকদের বকুনি দিতে লাগলেন । যীশু তা দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে শিষ্যদের বললেন, ছেলে মেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিও না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মত লোকদেরই । আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট ছেলে মেয়েদের মত করে ঈশ্বরের শাসন মেনে না নিলে কেউ কোন মতেই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারবে না । তারপর যীশু সেই ছেলেমেয়েদের কোলে নিলেন এবং তাদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন” ( মার্ক ১০ : ১৩ - ১৬ পদ ) ।
সব জায়গার সব ছেলেমেয়েদের যীশু ভালবাসেন ও আদর করেন । তিনি আপনাদের হৃদয়ে বাস করতে চান । আপনাদের প্রত্যেকের জন্য তাঁর একটি পরিকল্পনা আছে, আর তিনি আপনাদের জীবন পরিচালনাও করতে চান ।
এক সময় যীশু যখন তাঁর বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ফুল ও পাখিদের চেয়েও ছেলেমেয়েরা ঈশ্বরের চোখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
পাখিরা বীজ বুনেও না, খাবার জমা করেও রাখে না । তবুও ঈশ্বর তাদের খাবার দেন । তিনিই সাহায্য করেন যেন পাখিরা ছোট ছোট পোকা - মাকড় বা বীজ খাবার জন্য পায় । আর, ফুল তো মাত্র কদিন বেঁচে থাকে । ঈশ্বর তাদের কি সুন্দর রং ও আকার দিয়েছেন । আপনারা তো ঈশ্বরের কাছে এইগুলি থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । সেজন্য , তিনি যদি পাখি ও ফুলের দেখাশোনা করেন, তাহলে তাঁর ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা আরও কত না বেশি করবেন ! ( মথি ৬ : ২৫ - ৩৩ পদ দেখুন ) ।
ঈশ্বর আপনাকে খাবার ও কাপড় - চোপড় দেন ; ভাল হতে এবং দয়ালু হতে সাহায্য করেন । আপনার উচিত তাঁর উপর নির্ভর করা , কারণ তিনিই জানেন , আপনার জন্য কোনটা সবচেয়ে ভাল । ঈশ্বর হচ্ছেন ভালবাসার ঈশ্বর; যাদের প্রয়োজন, তিনি তাদের সাহায্য করতে চান । আপনার সমস্যার সময়, অসুস্থতার সময় অথবা দুঃখের সময় তিনি সাহায্য করতে চান । বাইবেল বলে, “ তাঁর ইচ্ছামত যদি আমরা কিছু চাই তবে তিনি আমাদের কথা শোনেন” ( ১ যোহন ৫ : ১৪ পদ ) ।
একজন বাবার দুটি ছেলে ছিল । ছোট ছেলেটি বলল, “ আমাকে আমার টাকা-পয়সার ভাগ দেও ।” সে তার ভাগের টাকা-পয়সা নিয়ে বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে গেল এবং তার বন্ধু - বান্ধবদের সাথে আমোদ - প্রমোদ করে সব টাকা - পয়সা নষ্ট করে ফেলল । খুব তাড়াতাড়ি সব শেষ হয়ে গেলে, তার বন্ধু - বান্ধবেরাও তাকে ফেলে চলে গেল ।
একজন লোক তাকে শূকর চরানোর কাজ দিল, কিন্তু তার খাওয়ার মত এমন কিছু সে পায় নাই । সে খুবই ক্ষুধার্ত হয়েছিল !
সে ভাবতে শুরু করল, আমার বাবার চাকরদের খাবার জন্য কত কিছু আছে । আমি বাড়ি ফিরে যাব এবং আমার বাবাকে বলব, ‘ আমি পাপ করেছি । আমি আর তোমার ছেলে থাকার যোগ্য না । আমি কি তোমার চাকর হিসাবে কাজ করতে পারি ? ছোট ছেলেটি তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল ।
বাবা কিন্তু রাত জেগে জেগে তার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । ছেলেকে হারিয়ে তার ছিল খুবই কষ্ট ! যখন তিনি তার ছেলেকে আসতে দেখলেন, তখন দৌড়ে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ও চুমু খেলেন !
ছেলেটি বলল , “বাবা, আমি পাপ করেছি । আমি আর তোমার ছেলে থাকার যোগ্য না । আমাকে শুধু তোমার একজন বেতনভোগী চাকরের মত রাখ ।”
বাবা কিন্তু তাকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন । তিনি তার চাকরদের বললেন, “ এর গায়ে জামা ও পায়ে জুতা দেও । আর একটা বাছুর কাট যেন আমরা সকলে মিলে খুশি মনে খাওয়া-দাওয়া করতে পারি । কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু আবার বেঁচে উঠেছে ; হারিয়ে গিয়েছিল , কিন্তু পাওয়া গেল ।” লূক ১৫ : ১১ - ২৪ পদগুলি থেকে নেওয়া ।
গল্পটি আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, যীশু সব পাপীদের কতটা ভালবাসেন । বাইবেল বলছে, “একজন পাপী পাপ থেকে মন ফিরালে ঈশ্বরের দূতদের মধ্যে আনন্দ হয়” ( লূক ১৫ : ১০ পদ ) ।
ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে কত ভালবাসেন , সে সম্পর্কে বাইবেল আমাদের আরও একটা গল্প বলে ।
একদিন একজন লোক ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল । পথের মাঝে সে ডাকাতের হাতে পড়ল । ডাকাতরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে আহত করল, আর তার টাকা - পয়সা , কাপড়-চোপড় সবই কেড়ে নিল এবং পালিয়ে গেল । লোকটি ভীষণ আহত হয়েছিল এবং উঠতেও পারছিল না ।
ঐ রাস্তা দিয়ে একজন পুরোহিত যেতে যেতে আহত লোকটিকে দেখলেন, কিন্তু কোন সাহায্য করলেন না বরং রাস্তার একপাশ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন ।
একজন লেবীয় ঐ রাস্তায় আসছিলেন । তিনিও আহত লোকটিকে দেখলেন এবং একটু থেমে কাছে গিয়ে লক্ষ্যও করলেন । কিন্তু তিনিও কোন সাহায্য করলেন না । তিনি রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে চলে গেলেন ।
তারপর, একজন শমরীয় তার গাধায় চেপে ঐ রাস্তায় এলেন । তিনি আহত লোকটিকে দেখে, কোন সাহায্য করা যায় কিনা ভেবেই থামলেন । তারপর তিনি ঐ লোকটির ক্ষত তেল দিয়ে ধুয়ে বেঁধে দিলেন এবং তার গাধার পিঠে করে কাছের একটা হোটেলে নিয়ে গেলেন ।
এই দয়ালু শমরীয় লোকটি সকাল বেলা হোটেল মালিককে বললেন , “যতদিন না সুস্থ হচ্ছে, ততদিন এই লোকটির যত্ন করবেন । আর এই টাকাগুলি আপনার খরচের জন্য রাখুন । যদি এতেও না হয় , তাহলে আমি যখন আবার আসব, তখন দিয়ে দেব ।” অংশটি লূক ১০ : ৩০ - ৩৫ পদ থেকে নেওয়া ।
যীশু চান যেন আমরা যে কোন লোকের প্রয়োজনের সময় দয়া ও ভালোবাসা দেখাই । যীশুর ভালোবাসা যখন আমাদের হৃদয়ে থাকে, তখন আমরা স্বার্থপর অথবা অহংকারীর মত কিছুই করতে পারব না, কিন্তু নম্রভাবে আমাদের নিজেদের কথা চিন্তা না করে অন্যদের কথাই চিন্তা করব । তখন আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখব না , কিন্তু অন্যরা কি অনুভব করে তা চিন্তা করতে ও বুঝতে চেষ্টা করব । বাইবেল বলে , “ভালবাসার মনোভাব নিয়ে একে অন্যের সেবা কর” ( গালাতীয় ৫ : ১৩ পদ ) ।
আমাদের শত্রুদেরও ভালবাসতে হবে এবং যারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাদের ক্ষমা করতে হবে । আমরা মন্দের বিপক্ষে কখনও মন্দ করতে পারি না ।
যীশুর ভালবাসা যখন আমাদের হৃদয়ে থাকে, তখন আমরা আমাদের বন্ধু - বান্ধবদের প্রতি দয়ালু হব, পিতা - মাতার বাধ্য থাকব এবং প্রভু আমাদের জন্য কি করেছেন তা খুশি মনে অন্য লোকদের বলব ।
যীশু আমাদের এত বেশি ভালোবাসেন যে তিনি নিষ্ঠুরভাবে ক্রুশে আমাদের জন্য মারা গেলেন । এখন আমাদের উচিত তাঁকে অনেক অনেক ভালোবাসা দেওয়া, তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় ও জীবন সমর্পণ করা ।
“তিনি আমাদের প্রথমে ভালবেসেছিলেন বলেই আমরা ভালবাসি” ( ১ যোহন ৪ : ১৯ পদ ) ।
যীশু করেন প্রেম আমায়
১। যীশু করেন প্রেম আমায়
বাইবেলে তা জানা যায় ;
তাঁহার শিশু কোমল প্রাণ
কিন্তু তিনি শক্তিমান ।
ধূয়া - হাঁ, ভালবাসেন, - ৩
বাইবেলে জানা যায় ।
২। ভালবাসেন প্রাণ দিলেন ,
স্বর্গের দ্বারও খুলিলেন,
তিনি ধুইবেন পাপ আমার
দিবেন স্বর্গে অধিকার ।
৩ । অশেষ ভালবাসা তাঁর
থাকেন নিকটে আমার ;
ছাড়ব না গেলেও প্রাণ
আমায় লইবেন স্বর্গধাম ।
- মদনমোহন বিশ্বাস ।