John N. Reynolds
আমার জানা মতে সবচেয়ে বেশি কৌতুহল সৃষ্টি করেছিল আমি যখন জর্জ লেনকসের পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠার ঘটনাটা জানলাম । জর্জ লেনকস জেফারসন জেলার একজন কুখ্যাত ঘোড়া চোর ছিল । সে দ্বিতীয় বারের মত জেল খাটছিল । একই অপরাধে, অর্থাৎ ঘোড়া চুরির জন্য এর আগে আমেরিকার কানসাস প্রদেশের সেজিক জেলা তাকে প্রথম বার জেলে দেয় ।
১৮৮৭ এবং ১৮৮৮ সালের শীতকালে সে কয়লার খনিতে কাজ করছিল । যে স্থানে সে কাজ করছিল, তা তার কাছে বিপদজনক বলে মনে হয়েছিল । ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সে এ বিষয়ে জানাল, কিন্তু সেই কর্মকর্তা স্থানটি পরীক্ষা করে নিরাপদ বলে সিদ্ধান্ত দিলেন । তিনি লেনকসকে তার কাজে ফিরে যেতে বললেন । আসামি লেনকস বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করল । সে কাজ শুরু করার এক ঘন্টার মধ্যেই সেই স্থানের ছাদ ভেঙে পড়ল এবং তার জীবন্ত কবর হল । এই অবস্থায় পুরো দুই ঘন্টা তাকে থাকতে হল ।
রাতের খাবারের সময় তাকে না পেয়ে খোঁজ করা হল । তারপর তাকে ভাঙা ছাদের স্তূপের নিচে পাওয়া গেল । তাকে প্রাণহীন মনে হল । তাকে উপরে তুলে আনা হল এবং জেলের ডাক্তার পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করলেন । তাকে হাসপাতালে এনে ধুয়ে পরিষ্কার করে কবর দেবার পোশাক পরানো হল। তার জন্য একটা কফিন বাক্স হাসপাতালে আনা হল । মৃতের জন্য শেষ কাজ সম্পন্ন করতে যাজক এলেন । হাসপাতালের সেবক কয়েকজন আসামিকে বললেন লেনকসের মৃত দেহ তুলে কফিন বাক্সের মধ্যে রাখার জন্য । আসামীদের একজন মৃতদেহের মাথা ও অন্য আর একজন পা ধরে ঘরের অর্ধেক পথ যাওয়ার পর একজন হঠাৎ হোঁচট খেয়ে ভারসাম্য হারাল। মৃতদেহটি মাটিতে পড়ে মাথায় আঘাত পাওয়া মাত্রই তার গলা দিয়ে গভীর আর্তনাদ বের হয়ে আসল এবং উপস্থিত সকলেই খুব আশ্চর্য হয়ে গেল । খুব শীঘ্র মৃত চোখ খুলল এবং তার মধ্যে জীবনের লক্ষণ পাওয়া যেতে লাগল । ডাক্তার ডাকতে পাঠানো হল, কিন্তু ডাক্তার পৌঁছানোর পূর্বে ৩০ মিনিটের মধ্যে মৃত লোক এক কাপ জল চাইল । যখন ডাক্তার পৌঁছাল তখন সে জল পান করছিল ।
কফিন বাক্স সাথে সাথে সরানো হল যা পরে অন্য এক আসামীকে কবর দিতে ব্যবহার করা হয় । লেনকসের দেহ থেকে কবর দেবার পোশাক খুলে ফেলা হল এবং আসামীর পোশাক পরিয়ে দেয়া হল । পরীক্ষা করে দেখা গেল তার এক পায়ের দুই জায়গা ভেঙেছে, আর দেহের অন্যান্য জায়গা অল্প অল্প ক্ষত হয়েছে । ছয় মাস হাসপাতালে থাকার পর লেনকস তার কাজে ফিরে গেল ।
লেনকসের এক সহকর্মীর কাছ থেকে আমি তার এই অদ্ভুত মৃত্যুর অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলাম । তারপর থেকেই লেনকসের নিজের মুখে তার এই অভিজ্ঞতার কথা শুনতে আমি তার সাথে পরিচিত হতে চেষ্টা করছিলাম । বেশ কয়েক মাসেও সুযোগ আসে নাই ; কিন্তু অবশেষে সুযোগ এসে গেল । বছরকার রিপোর্ট তৈরি করতে আমাকে খনি থেকে জেল অফিসে বদলি করা হল । একদিন এই লোকটার মৃত্যু থেকে জীবনে ফিরে আসার বিষয় আলোচনা হচ্ছিল আর সেই সময় লেনকস অফিসের দরজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল । তখন একজন আমাকে তার দিকে ইশারা করলেন । খুব অল্প দিনের মধ্যেই আমি তাকে পেয়ে একটা চিঠি দিয়ে আমার অফিসে আসতে অনুরোধ করলাম । সে আসলে আমি তার সাথে ভাল ভাবে পরিচিত হলাম এবং তার মুখ থেকেই শুনলাম আশ্চর্য এক ঘটনা । সে বয়সে তরুণ ; তার বয়স ত্রিশের উপরে নয় । সে একজন দাগী আসামী, লেখাপড়ায় ভাল ও স্বাভাবিকভাবে বেশ উজ্জ্বল ।
তার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে তখনই যখন সে মৃত্যুবরণ করেছিল । তার মুখ থেকে শুনে আমি শর্টহ্যান্ড রিপোর্টারের মত তার জীবন - কথা শর্টহ্যান্ডে লিখলাম ।
তার বর্ণনা মত - ‘সারা সকাল আমি একটা ভয়ঙ্কর কিছু অনুভব করছিলাম । আমার এই অনুভূতি এতই অস্বস্তিকর ছিল যে আমি আমার খনিজ বিভাগের কর্তা গ্রেসনের কাছে গিয়েছিলাম । তারপর তাকে আমার অনুভূতির কথা জানিয়ে অনুরোধ করেছিলাম যেন তিনি আমার কয়লা তোলার স্থানটি পরীক্ষা করে দেখেন যেখানে আমি কয়লা তোলার কাজ করি । তিনি এসে স্থানটি ভাল ভাবে পরীক্ষা করে বললেন যে এখানে বিপদের কোন সম্ভাবনা নেই । তিনি আমাকে কাজ করতে বললেন আর তিনি মনে করলেন, আমি হয়ত দুর্বল হয়ে পড়েছি । তারপর আমি কাজে যোগ দিলাম এবং এক ঘন্টা যাবত কয়লা তোলার কাজ করছিলাম । হঠাৎ করে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল । তারপর আমার মনে হল, একটা বিরাট লোহার দরজা খুলে গেল এবং আমি তার মধ্য দিয়ে ঢুকছি । তখন আমার মনে হল যে আমি মরে গেছি এবং অন্য এক জগতের মধ্যে আছি । আমি কাউকে দেখতে ও কোন শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম না । অজানা কোন কারনে আমি দরজা থেকে সরে গিয়ে কিছুটা দূরে একটা চওড়া নদীর পারে পৌঁছে গেলাম । এই স্থানে অন্ধকার বা আলো কোনটাই ছিল না । কিন্তু রাতের তারা ভরা আকাশ থাকলে যেমন আলো দেখা যায়, ঠিক তেমন আলো সেখানে ছিল । আমি খুব বেশি সময় ধরে নদীর পাড়ে থাকলাম না । যতক্ষণ না জলের মধ্যে বৈঠা বাওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম । শিঘ্রই একজন লোক বৈঠা বেয়ে আমার কাছে আসলেন ।’
‘আমি কথা বলতে পারছিলাম না । তিনি অল্প সময় আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন যে তিনি আমার জন্য এসেছেন । তিনি আমাকে নৌকায় উঠতে বললেন এবং এপার থেকে ওপারে নৌকা বেয়ে চললেন । আমি তার কথা মেনে নিয়েছিলাম এবং কোন কথাও বলতে পারছিলাম না । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছিলাম, তিনি কে আর আমি কোথায় এসেছি ? কিন্তু মনে হচ্ছিল আমার জিভ তালুতে আটকে গেছে । একটা কথাও আমি বলতে পারছিলাম না । শেষ পর্যন্ত আমরা অন্য পাড়ে পৌঁছলাম । আমিও নৌকা থেকে নামলাম এবং নৌকার মাঝি আমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।’
এই ভাবে আমি একা হয়ে গেলাম, আর কি করব তা জানা ছিল না । সামনের দিকে তাকিয়ে আমি একটা অন্ধকার উপত্যকা দেখতে পেলাম যেখান থেকে দু’টো রাস্তা বের হয়েছে । একটা ছিল হাঁটা চলার মত বেশ ভাল, খুব চওড়া রাস্তা । অন্যটি ছিল সরু রাস্তা যা অন্য আর এক দিকে চলে গেছে । নিজের ইচ্ছায় আমি ভাল ও চওড়া রাস্তাই চলার জন্য বেছে নিলাম । কিছুদূর যেতেই আমার মনে হল, অন্ধকার অনেক বেড়ে গেছে । দূর থেকে আলোর ঝলকানি আসছিল । এভাবে আলো দেখেই আমি আমার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ।’
‘ হঠাৎ করেই মানুষের মত একটা প্রাণীর সঙ্গে আমার দেখা হল, যার বর্ণনা দেওয়ার আমার পক্ষে অসম্ভব । আমি শুধু তার বাইরের চেহারার ভয়ংকর রূপের একটা অস্পষ্ট ধারণা দিতে পারি । কিছুটা মানুষের চেহারার মত হলেও সে আকারে যে কোন মানুষের চেয়েও বড় , যা আগে কখনও দেখি নাই । সে অবশ্যই কম হলেও উচ্চতায় দশ ফুট হবে । তার পিঠের উপর দু’ টি পাখা ছিল এবং সে কয়লার মত কালো আর সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছিল । তার হাতে ছিল একটা বর্শা, যার হাতল অবশ্যই লম্বায় পনের ফুট হবে । আগুনের বলের মত গোল তার চোখ দু’টি আর তার দাঁত মুক্তার মত সাদা প্রায় ইঞ্চি খানেক লম্বা মনে হল । তার নাক ? অবশ্য যদি নাক হিসাবে বলা হয় -, খুব বড়, চওড়া এবং চ্যাপ্টা । তার চুলও ছিল খুব মোটা , ভারী আর লম্বা, যা তার বিরাট চওড়া কাঁধের উপর দিয়ে ঝুলছিল । তার গলার আওয়াজ চিড়িয়াখানায় রাখা সিংহের গর্জনের মত ছাড়া আমার আর কিছু মনে হচ্ছিল না ।’
সবচেয়ে প্রথম তাকে আমি এক আলোর ঝলকানিতে দেখে ভয়ে কেঁপে উঠেছিলাম । তাকে দেখে আমি অ্যাস্পেন গাছের পাতার মত কেঁপে উঠেছিলাম । সে তার বর্শাটা এমন ভাবে তুলল যেন আমার দিকে ছুড়ে মারবে । আমি হঠাৎ করেই থেমে গেলাম । যে ভয়ানক গর্জনের আওয়াজ আমি কখনও শুনি নাই, মনে হচ্ছিল সেই গর্জন দ্বারাই সে আমাকে তার পিছনে অনুসরণ করতে বলছিল , যেন পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই তাকে পাঠানো হয়েছে । আমি তাকে অনুসরণ করলাম, কারণ এ ছাড়া আমি আর কি বা করতে পারি ? কিছুটা দূরে এগিয়ে যাওয়ার পর আমাদের সামনে একটা বড় পর্বত উপস্থিত হল । পর্বতের অংশ এমন ভাবে খাড়া যেন মনে হল আধাআধি করে এক অংশ আলাদা করে সরিয়ে রাখা হয়েছে । খাড়া পর্বতটির চ্যাপ্টা অংশে স্পষ্ট লেখা আছে, ‘ এটা নরক’ । আমার পথ প্রদর্শক তার বর্শার হাতল দিয়ে চ্যাপ্টা অংশে তিন বার খুব জোরে ঘা দিল । এক বিরাট দরজা খুলে গেল এবং তার মধ্য দিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । পর্বতের ভিতর দিয়ে একটা সুরু পথে আমাকে পরিচালনা করা হল’ ।
‘ কিছুক্ষন ধরে গভীর অন্ধকারে পথ চলতে থাকলাম । আমার পথ প্রদর্শকের ভারী পায়ের শব্দ শুনেই তাকে আমি অনুসরণ করছিলাম । সারা পথ জুড়ে মৃতপ্রায় লোকের গোঙানির মতন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম । আরো সামনের দিকে এই গোঙানির শব্দ বাড়তে লাগল এবং পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলাম - জল - জল । আমরা আর একটা দরজা দিয়ে ঢুকলাম এবং পার হয়ে যাবার সময় লক্ষ লক্ষ গোঙানির মত জল - জল বলে চিৎকার শুনতে পেলাম । আমার পথ প্রদর্শকের ঘা দেওয়ায় হঠাৎ আর একটা দরজা খুলে গেল এবং আমরা পর্বতের মধ্য দিয়ে একটা প্রান্তরে উপস্থিত হলাম ।’
‘এই জায়গায় এসে আমার পথ প্রদর্শক আমাকে ছেড়ে অন্য হারানো আত্মাদের পথ দেখিয়ে আনতে গেল । কিছু সময়ের জন্য আমি এই খোলা প্রান্তরে রইলাম । ঠিক সেই সময়ে প্রথম প্রাণীটার মতন প্রায় একই রকম আর একজন কাছে আসল, তার হাতে বর্শার পরিবর্তে বড় তলোয়ার ছিল । সে এসে আমাকে আমার ভবিষ্যতের শাস্তি সম্পর্কে বলল । সে এমন গভীর শব্দে আমার সাথে কথা বলল, যা আমার আত্মাকে ভীত করে তুলল । সে বলল, “ তুমি এখন নরকে, আর তোমার কোন আশা নাই ।”
“ তুমি যখন পাহাড়ের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছ, তখন নিশ্চয়ই হারানো লোকদের গোঙানি - , তাদের জল - জল বলে শুকনা, তপ্ত জিভের হাহাকার শুনেছ । ঐ পথ দিয়ে গেলে একটা দরজা দিয়ে আগুনের হ্রদে যাওয়া যাবে, যা তোমার শেষ বিচারের নির্দিষ্ট জায়গা । চিরকালের জন্য এই কষ্টের জায়গায় ঢুকবার আগে তোমাকে কিছু সময়ের জন্য এই বিরাট প্রান্তরে থাকতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে তুমি অন্য হারানো আত্মাদের মত স্বর্গের আনন্দ দেখতে পাও এবং বুঝতে পার যে আনন্দের চেয়ে কষ্ট কত কঠিন ভাবে তোমাকে ভোগ করতে হবে ।”
“ এই সময় আমি একা হয়ে গেলাম । যে ভয়ানক পথ দিয়ে আমি এসেছি - প্রথমে না বুঝলেও এখন আমি হতবাক হয়ে পড়লাম । আমার শরীরের শক্তি যেন শেষ হয়ে গেল ; আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিও কেমন অসাড় হয়ে পড়ল । আমি মরা মানুষের মতন অক্ষম ও নির্জীব হয়ে পড়ে গেলাম । একটা ঘুম ঘুম ভাব আমাকে চেপে ধরল । আধা জেগে থাকা আধা ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্ন দেখলাম বলে মনে হল । অনেক দূরে, অনেক উপরে আমি একটা সুন্দর শহর দেখতে পেলাম - যা আমরা বাইবেলে পড়ে থাকি । সূর্যকান্ত মনির তৈরী দেওয়াল গুলো অপূর্ব ও চমৎকার দেখাচ্ছিল । সামনে কিছু দূরে বিস্তীর্ণ ফুলে ঢাকা প্রান্তর, জীবন নদী ও কাঁচের সাগর দেখলাম । শহরের দরজা দিয়ে - অসংখ্য স্বর্গদূতেরা যাতায়াত করছে , চমৎকার গান গাইছে । অনেকের মধ্যে আমি আমার মাকে দেখলাম , যিনি আমার খারাপ কাজের জন্য দুঃখ পেতে পেতে ভগ্ন হৃদয়ে কয়েক বছর আগে মারা যান । তিনি আমার দিকে তাকালেন - মনে হল, তার কাছে যেতে ইশারা করছেন । কিন্তু আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না । একটা ভারী বোঝা আমাকে চেপে রাখছিল । এই সময় গন্ধভরা সুন্দর ফুলগুলো থেকে মৃদু মন্দ বাতাস আমার দিকে আসতে শুরু করল এবং আমি আগের চেয়েও মিষ্টি সুরে স্বর্গদূতদের গান শুনতে পেলাম । আমি ভাবতে লাগলাম , “ যদি এরকম একজন আমিও হতে পারতাম ।”
আমি এই স্বর্গসুধা পান করা থেকে হঠাৎ করেই আলাদা হয়ে পড়লাম । আধা ঘুম থেকে জেগে উঠলাম ।
অন্ধকার জগতের এক সঙ্গী আমাকে সুখের স্বপ্ন থেকে যেন ফিরিয়ে আনল, আর বলল যে এখন আমার ভবিষ্যৎ জীবনে প্রবেশের সময় হয়েছে । সে তার সাথে চলতে আদেশ করল । রওনা হতেই আমি আবার অন্ধকার পথে ঢুকলাম এবং আমার পথ প্রদর্শককে অনুসরণ করলাম । যখন আমরা একটা দরজার সামনে আসলাম , তার পাশের ছোট দরজা দিয়ে ঢুকলাম । অবশেষে আর একটা দরজা পার হয়ে আসতেই আমরা আমাদের সামনে সেই আগুনের হ্রদ দেখতে পেলাম
“ আমার সামনে যতদূর দেখা যায়, আমি ততটা দূর পর্যন্ত শুধু আগুন আর গন্ধকের হ্রদই দেখতে পেলাম । প্রচন্ড ঝড়ে যেমন সাগরের ঢেউগুলি উত্তাল হয়ে পড়ে, তেমনি করে প্রচন্ড আগুনের উত্তাল ঢেউগুলি একে অন্যের সাথে জড়িয়ে ওঠানামা করছিল । ঢেউয়ের মাথায় মাথায় লোকদের দেখছিলাম, যারা এই আগুনের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে সাথে একবার ঢেউয়ের মাথায় উঠছিল আর একবার গভীরে ডুবে যাচ্ছিল । যখন তারা ভয়ঙ্কর আগুনের হ্রদের ঢেউতে উঠানামা করছিল, তখন তারা ধার্মিক ঈশ্বরকে অভিশাপ দিচ্ছিল আর জলের জন্য তাদের হৃদয় বিদারক - কান্নার চিৎকার যে ভীষণ কষ্টকর তা বুঝতে পারছিলাম । সমস্ত আগুনের এলাকা এই সব হারানো আত্মাদের আর্তনাদে বারবার ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।
‘হঠাৎ করেই আমার চোখ ঘুরিয়ে আমি সেই দরজার দিকে তাকালাম - যেটা দিয়ে কিছুক্ষণ আগে ঢুকেছি । সেই দরজার উপরে লেখা দেখতে পেলামঃ ‘এই হল তোমার শাস্তি যা চিরকাল ধরে চলবে ।’
একটু পরই আমি অনুভব করলাম , আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে এবং আমি দেখলাম, আমি আগুনের হ্রদে ডুবে যাচ্ছি । জলের জন্য আমার অন্তরে ভীষণ কষ্ট অনুভব করলাম এবং হাহাকার করে জল চাইলাম । ঠিক এই সময় জেলখানার হাসপাতালে আমার চোখ খুলে গেল ।
আমার এই অভিজ্ঞতার কথা এর আগে আমি আর কাউকে বলিনি , কারণ জেলখানার কর্মকর্তারা যদি তা জানে তাহলে আমাকে পাগল মনে করে পাগলা গারদে বন্ধ করে রাখবে । এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমি এটা সুস্পষ্ট বুঝতে পেরেছি এবং সন্তুষ্ট হয়েছি এটা ভেবে যে এখনও আমি বেঁচে আছি । আমি বুঝতে পেরেছি যে স্বর্গ ও নরক আছে , সেই পুরানো নরকের কথা যা বাইবেলে লেখা আছে । তবে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আমি আর ঐ নরকে যাব না ।’
“ যখনই হাসপাতালে আমার চোখ খুলে গেল আর আমি বুঝতে পারলাম আবার আমি এই পৃথিবীতে জীবিত, সাথে সাথে আমার হৃদয় আমি ঈশ্বরকে দেই । আমি এখন একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে বেঁচে থাকব এবং খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে মারা যাব । আমার জীবন থেকে ভয়ঙ্কর নরকের অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারব না । আর স্বর্গের সুন্দর সুন্দর দৃশ্যগুলিও ভুলতে পারব না যা আমি দেখেছি । আমি আমার বৃদ্ধা মার সাথে মৃত্যুর পর দেখা করতে পারব । সুন্দর নদীর পাড়ে বসার অনুমতি পাব, সুগন্ধে ভরা ফুলের বাগানে, পাহাড়ের উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রান্তরের এপার থেকে ওপারে স্বর্গদূতদের সাথে ঘুরে বেড়াতে পারব । এসব এমনই চমৎকার যে সাধারণ মরণশীল মানুষ কল্পনাও করতে পারে না । উদ্ধার প্রাপ্তদের গান - , এবং সব কিছুই এ জগতে আমার খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের জন্য সাহায্য করবে । আমার কামাসক্ত জীবন আমি ছেড়েছি যা আমি জেলে আসার আগে উপভোগ করতাম । আমার খারাপ সঙ্গীদের আমি ত্যাগ করেছি । আর এবার যখন জেল থেকে মুক্তি পাব, আমি ভাল লোকদের সঙ্গী হব । “
আমরা এই ঘটনা আপনাদের কাছে বলতে চাচ্ছি ঠিক যেমন করে লেনকস বর্ণনা করেছে । ঈশ্বর এই আশ্চর্য অভিজ্ঞতাকে আশীর্বাদ করুন যেন মিঃ লেনকসের এই অভিজ্ঞতা পড়ে অনেক হারানো আত্মা পরিবর্তিত হয়ে জেগে ওঠে ।
কিভাবে মানুষ একটা সত্যি কারের জলন্ত নরকের অভিজ্ঞতাকে সন্দেহ করতে পারে ? আমাদের কাছে বাইবেল আছে যা হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য এবং আরো আছে মিঃ লেনকসের কাছে প্রকাশিত ঘটনা যা বাস্তবেও নরকের কথা শিক্ষা দেয় । প্রিয় ভাই ও বোনেরা, থামুন ! বাস্তবের মুখোমুখি হোন ! আপনাদের জীবনী লেখা হচ্ছে । আপনি যদি নিজেকে পাপী বলে স্বীকার করেন , তখন ঈশ্বর আপনার পাপ ক্ষমা করে আপনাকে রক্ষা করবেন । উদ্ধার পাবার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে পাপ থেকে শুচি হওয়া এবং একথা বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা যে যীশু খ্রীষ্টের রক্ত আপনার পাপের জন্য পাতিত হয়েছে । যখন ঈশ্বরের কাছে থেকে আপনি এই ক্ষমা গ্রহণ করবেন, তখন তিনি আপনাকে শান্তি দেবেন -, দেবেন বিশ্রাম । এই জীবন থেকে আপনি মুক্ত হবেন, এবং আরো অনেক কিছু থেকে ও স্বর্গীয় আশীর্বাদ পাবার জন্যও মুক্ত হবেন । না হলে কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘন্টা নরকে থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতার বদলে হয়ত অনন্তকাল নরকে কাটাবেন ।
লাসার ও একজন ধনী লোক
( লূক ১৬ : ১৯ - ৩১ পদ )
“একজন ধনী লোক ছিল । সে বেগুনে কাপড় ও অন্যান্য দামি দামি কাপড়-চোপড় পরত । প্রত্যেক দিন খুব জাঁকজমকের সঙ্গে সে আমোদ - প্রমোদ করত । সেই ধনী লোকের দরজার কাছে লাসার নামে একজন ভিখারীকে প্রায়ই এনে রাখা হত । লাসারের সারা গায়ে ঘা ছিল । সেই ধোনি লোকের টেবিল থেকে যে খাবার পড়ত তা - ই খেয়ে সে পেট ভরাতে চাইত, আর কুকুরেরা তার ঘা চেটে দিত ।”
“একদিন সেই ভিখারীটি মারা গেল । স্বর্গদূতেরা এসে তাকে আব্রাহামের কাছে নিয়ে গেলেন । তারপর একদিন সেই ধনী লোকটিও মারা গেল এবং তাকে কবর দেওয়া হল । মৃতস্থানে খুব যন্ত্রণার মধ্যে থেকে সে উপরের দিকে তাকাল এবং দূর থেকে আব্রাহাম ও তাঁর পাশে লাসারকে দেখতে পেল । তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘ পিতা আব্রাহাম , আমাকে দয়া করুন । লাসারকে পাঠিয়ে দিন যেন তার আঙ্গুলের আগাটা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ ঠান্ডা করে । এই আগুনের মধ্যে আমি বড়ই কষ্ট পাচ্ছি ।”
“কিন্তু আব্রাহাম বললেন, ‘ মনে করে দেখ, তুমি যখন বেঁচে ছিলে তখন কত সুখ ভোগ করেছ আর লাসার কত কষ্ট ভোগ করেছে । কিন্তু এখন সে এখানে সান্তনা পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ । এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন একটা বিরাট ফাঁক রয়েছে যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ এখান থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে যেতে না পারে এবং ওখান থেকে পার হয়ে আমাদের কাছে আসতে না পারে ।’
“ তখন সেই ধনী লোকটি বলল, ‘ তাহলে পিতা, দয়া করে লাসারকে আমার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিন, যেন সে আমার পাঁচটি ভাইকে সাবধান করতে পারে ; তা না হলে তারাও তো এই যন্ত্রণার জায়গায় আসবে ।”
“ কিন্তু আব্রাহাম বললেন, মোশি ও নবীদের লেখা বই তো তাদের কাছে আছে । ওরা তাদের কথায় মনোযোগ দিক ।”
“সেই ধনী লোকটি বলল, ‘না , না , পিতা আব্রাহাম, মৃতদের মধ্য থেকে কেউ তাঁদের কাছে গেলে তারা পাপ থেকে মন ফিরাবে ।”
“তখন আব্রাহাম বললেন, মোশি ও নবীদের কথা যদি তারা না শোনে তবে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠলেও তারা বিশ্বাস করবে না ।”
পবিত্র বাইবেল থেকে নিচের অংশগুলি পড়তে অনুরোধ করছি -
প্রকাশিত বাক্য ২১ : ৭ - ৮ পদ
প্রকাশিত বাক্য ২০ : ১০ , ১২ ও ১৩ পদ
২ পিতর ৩ : ১০ - ১২ পদ
Dislaimer
We give the account to the reader just as we received it from Lennox. We recognize the inability of the human mind to describe heaven or hell. Therefore the account of Mr. Lennox may not be an accurate description of hell but rather a glimpse into eternity. May God bless this experience to the awakening of many lost souls.