ভালবাসা …………. ! সকল ভাষায় এটি একটি চমৎকার শব্দ । এটি আমাদের মনের মধ্যে কিছু কিছু কথা বলে থাকে, যা হল ঃ স্নেহ, মায়া, উষ্ণতা, দয়া, সমঝোতা, নিরাপত্তা এবং মা’র কথা ? কিন্তু আপনার নিজের কথা চিন্তা করুন ; - এই সুন্দর শব্দটি আপনার কাছে সত্যি কোন অর্থ প্রকাশ করে কি ? আপনি কি ভালবাসা পেতে চান ? আপনি কি ভালবাসতে চান ?
ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা এবং তাঁর ভালবাসা যদি আপনার হৃদয়ে থাকে, তাহলে তা আপনাকে ভালবাসতে ও ভালবাসা পেতে সাহায্য করবে । সকল ভালবাসার উৎস হলেন ঈশ্বর । ১ যোহন ৪ : ১৬ পদে একথা লেখা আছে, “ আমরা জানি ঈশ্বর আমাদের ভালবাসেন , আর তাঁর ভালবাসার উপরে আমাদের বিশ্বাস আছে । ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা । ভালবাসার মধ্যে যে থাকে সেই ঈশ্বরের মধ্যেই থাকে এবং ঈশ্বর তার মধ্যে থাকেন ।” ঈশ্বরের মধ্য দিয়ে বা তাঁকে ছাড়া কেউই সত্যিকার ভালবাসা খুঁজে পায় না, বা সত্যিকার অভিজ্ঞতা অর্জন করতেও পারে না ।
ভালবাসার ঠিক উল্টো শব্দগুলি হচ্ছেঃ ঘৃণা, অবিশ্বাস, স্বার্থপরতা এবং যুদ্ধ । আজকের পৃথিবীতে বিভিন্ন অবস্থার দিকে তাকালে এবং এখানকার অনেক পরিবারে যে সমস্যাগুলি রয়েছে , তা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে ভালবাসার কি ভীষণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।
আপনার অবস্থা কি ? আপনি কি অনুভব করেন যে আপনি ভালবাসা পাচ্ছেন ? আপনি কি আপনার হৃদয়ে কোন বেদনা অনুভব করেন ? অনুভব করেন যে স্নেহের অভাবে, উষ্ণতার অভাবে আপনার হৃদয়ের একাকীত্ব দূর হচ্ছে না ? কোন কোন সময় কি আপনি এও অনুভব করেন যে কেউই আপনার প্রতি সদয় নয় ? আপনি কি এমন পিতা-মাতার কাছে বড় হয়েছেন , যারা একে অন্যকে ভালবাসে না , অথবা তারা তাদের ছেলেমেয়েদের ভালবাসে না ? আজকের এই পৃথিবীতে এইরকম অনুভূতি অতি সাধারণ, যেখানে “প্রথমে আমি” এই মনোভাবই বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । একজন ব্যক্তির ব্যক্তি স্বার্থ এবং ইচ্ছা পূরণ করাই তার ক্ষত হৃদয়ের কারণ ।
ভালবাসা এমন কোন ইন্দ্রিয়গত আকর্ষণ নয়, যা শুধু তার নিজের ইচ্ছা বা আবেগকে খুশি করার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু প্রায়ই অন্য কারো কথাও চিন্তা করে থাকে । এই ধরনের আকর্ষণকে অনেকে ভালবাসাও বলে থাকে যা কিন্তু স্বার্থপর, কারণ তা শুধু নিজের উপভোগ চিন্তা । ভালবাসা কখনও শুধু নিজের ব্যক্তিগত সম্মান বা সন্তুষ্টি প্রচার করে না ।
জীবনে কোন দুঃখ - কষ্ট আসা মানে এই নয় যে ঈশ্বর আমাদের ভালবাসেন না । ঈশ্বর কোন কোন সময় আমাদের ভালর জন্য আমাদের জীবনে দুঃখ - কষ্ট অনুমোদন করেন । কোন পিতা-মাতা তাদের শিশুকে সত্যিই ভালবাসে বলে শিশু যা চাইবে তা - ই কিন্তু দেয় না ; কিন্তু শিশুর উপকারের কথা ভেবে তাকে দমনও করে রাখে ।
ভালবাসা সব সময়ই স্বার্থত্যাগী । সত্যিকার ভালবাসা অন্যের মঙ্গল চিন্তা করে । ভালবাসা উষ্ণ, সহানুভূতিশীল ও দয়াশীল। যদি আমরা সত্যিই ভালবাসতে পারি তাহলে আমাদের কাছের লোকদের প্রতি বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও আমরা হৃদয় থাকব । একজন প্রেমিক স্বামী এবং পিতা তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি সমভাবে অনুরাগ প্রকাশ করবে । তিনি তো খুশি মনে তাদের ভালর জন্য ভালবাসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এবং নিজেকে উৎসর্গ করতেও পিছপা হবেন না । ভালবাসায় ভরা একজন স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান করবে, আবার মা হিসাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যেও তাদের পিতা-মাতার প্রতি ভালবাসা ও সম্মানবোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে এবং সেই সাথে একে অন্যের প্রতিও । তিনি সুখী মনে তার পরিবারের সকলের জন্য শান্তিপূর্ণ এবং নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবেন । খ্রীষ্ট নির্দোষ হয়েও ক্রুশে মৃত্যুবরণ করে তাঁর ভালবাসার উদাহরণ দেখিয়েছেন ।
যদি আপনি ভালবাসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন - যদি আপনার হৃদয় খালি খালি মনে হয় , তাহলেও সত্যিকার ভালবাসা আপনি পেতে পারেন । ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে আপনি এই ভালবাসা পেতে পারেন । ঈশ্বর আপনাকে তাঁর নরম, সহৃদয় সহানুভূতি দিয়ে ভালবাসবেন, যার কোন সীমা নাই । তিনি আপনাকে দেখাশোনা করতে চান এবং আপনার জীবনের সব রকম জ্বালা - যন্ত্রণার মধ্যেও সাহায্য ও সহযোগিতা করতে চান । যদি আপনি নিজেকে একা একা মনে করেন আর মনে করেন কেউই আপনাকে পছন্দ করে না ; তবুও আপনি নিশ্চিত জানবেন যে একজন আছেন যিনি তাঁর পুত্রকে আপনার জন্য দান করেছেন । যিনি আপনার হৃদয়ের সব ব্যথা, সব দুঃখ অনুভব করতে পারেন । আপনার জীবনের নির্জন সময়ে, সবচেয়ে বিষন্ন দিনগুলিতে তিনিই আপনার পাশে থেকে সান্ত্বনা দেবেন, শক্তি দেবেন ও পরিচালনা দেবেন, যদি কিনা আপনি তাঁর দিকে ফেরেন ।
কিভাবে ঈশ্বরের কাছে আসা যায়, তা যদি আপনি না জেনে থাকেন ; শুধু মাত্র আপনার হৃদয় তাঁকে দিন, তাহলে তিনি শুনতে পাবেন । যদি এমন হয়, আপনি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, এমন কি ঈশ্বরকেও না; তাহলেও তাঁকে বলুন যেন তিনি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেন ।
যদি আপনি মনে করেন আপনি একজন পাপী ; ক্ষমা এবং ভালবাসা পাবার কোন আশা নাই , তাহলে আপনি আপনার সম্পূর্ণ হৃদয় নিয়ে ঈশ্বরের কাছে আসুন এবং অনুতাপ করে অতীতের পাপ ত্যাগ করুন । তাহলে তিনি আপনার স্নেহময় পিতা হবেন , যদি কি না আপনি সমস্ত হৃদয় নিয়ে তাঁর কাছে আসেন আর তাঁর কথামত বাধ্য হয়ে চলতে ইচ্ছুক হন ।
যখন ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করবেন এবং গ্রহণ করবেন, তখন তাঁর ভালবাসা আপনি অনুভব করবেন ও তাঁর সাথে আপনার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে যা কেউই কেড়ে নিতে পারবে না । এই সম্পর্ক শুধুমাত্র তখনই ভেঙ্গে যাবে যদি আমরা তাঁর কাছ থেকে চলে যাই ।
যেহেতু আপনি ঈশ্বরের ভালবাসা জানতে পেরেছেন এবং আপনার স্বার্থপর ভালবাসা ত্যাগ করেছেন , সেহেতু আপনি নিশ্চয়তা বোধ করবেন । এই নিশ্চয়তা বোধ হচ্ছে , আপনি ভালবাসা পাচ্ছেন এবং আপনার সমস্ত হৃদয় খুলে সত্যিই অন্যদের দেখাশোনা করতে পারছেন । কে কি বলল, তা নিয়ে এখন আর আপনি মাথা ঘামান না ; বরং আপনি এখন আপনার আশেপাশের লোকদের প্রয়োজন নিয়ে চিন্তা করেন এবং আকুল আগ্রহ নিয়ে ঈশ্বরের কাজ করতে চান যিনি আপনাকে ভালবাসেন । যখন আপনার আবেগ স্বার্থপর থাকবে না, ঈশ্বর তখন আপনাকে আশীর্বাদ করবেন এবং অনেক সত্য জানতে আপনার মনকে খুলে দেবেন । এই বিষয়টি বুঝতে ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায় আপনাকে সাহায্য করবে ।
ঈশ্বরের একটি পরিবার এই পৃথিবীতে আছে । তিনি আপনাকে তাঁর পরিবারের দিকে পরিচালিত করবেন, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন কারা ঈশ্বরের সেবা করে এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করে । এই পরিবার হচ্ছে ঈশ্বরের মন্ডলী । যীশু বলেছেন, ‘ যদি তোমরা একে অন্যকে ভালবাস তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার শিষ্য” ( যোহন ১৩ : ৩৫ পদ ) । এটাই হচ্ছে সত্যিকার ভালবাসা যা একে অন্যকে দেখাশোনা করে, একে অন্যের প্রতি সব কিছু ভাগাভাগি করে এবং অন্যকে সংশোধনও করে দেয় ।
যদি আপনি ভালবাসা সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান, তাহলে যোহন সুসমাচার পড়ুন । যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় পড়ুন, যেখানে নবী যিশাইয় আমাদের জন্য যীশুর জীবন উৎসর্গের কথা বলেছেন । গীত সংহিতা ৯১ অধ্যায়ে লেখা প্রতিজ্ঞার কথাও পড়ুন । তারপর, গীতসংহিতা ২৩ অধ্যায় ও ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায় পড়ুন। এইগুলি পড়তে পড়তে আপনি ঈশ্বরের পরিচালনা লাভ করবেন ।
আপনার অসুখী এবং একাকী জীবনের নিশ্চয়ই শেষ আছে । আপনি আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ ভার ঈশ্বরের উপরে দিয়ে দিন ; অর্জন করুন ঈশ্বরের ভালবাসার অভিজ্ঞতা, যা হচ্ছে মানুষের জন্য দেওয়া তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ । ঈশ্বর আপনাকে আশীর্বাদ করুন ।
আপনি যদি আরও জানার জন্য সাহায্য পেতে চান, তাহলে পুস্তিকার শেষে দেওয়া ঠিকানায় চিঠি লিখুন ।
১ করিন্থীয় ১৩ : ১ - ৮ ও ১৩ পদ
আমি যদি মানুষের এবং স্বর্গদূতদের ভাষায় কথা বলি কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমি জোরে বাজানো ঘণ্টা বা ঝনঝন করা করতাল হয়ে পড়েছি । যদি নবী হিসাবে কথা বলবার ক্ষমতা আমার থাকে, যদি আমি সমস্ত গুপ্ত সত্যের বিষয় বুঝতে পারি, আর যদি আমার সব রকম জ্ঞান থাকে, এমন কি, পাহাড়কে পর্যন্ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেবার মত পূর্ণ বিশ্বাস থাকে , কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোনই মূল্য নেই । আমার যা কিছু আছে তা যদি আমি গরীবদের খাওয়াবার জন্য দান করি, এমন কি, দেহটাও পোড়াবার জন্য দিয়ে দিই, কিন্তু আমার মধ্যে যদি ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোনই লাভ নাই ।
“ভালোবাসা সব সময় ধৈর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না, অহংকার করে না, খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও মন্দ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না, মন্দ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে । ভালবাসা সব কিছুই সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী, সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে ।”
“ এই ভালবাসা কখনও শেষ হয় না । নবী হিসাবে কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা শেষ হয়ে যাবে; বিভিন্ন ভাষায় কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা চলে যাবে ; জ্ঞান আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে ;”
“তাহলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বাস , আশা আর ভালবাসা - এই তিনটির শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে ; কিন্তু এগুলোর মধ্যে ভালবাসাই সবচেয়ে বড় ।”