‘ ঈশ্বর , তুমি কোথায় ?’ ‘ আমি তোমাকে চাই ।’ ‘তোমাকে আমার দরকার ।’ ‘ কি করে আমি তোমাকে পেতে পারি ?’ এই কি আপনার দুঃখ ভরা হৃদয়ের কান্না ? আপনার সমস্ত মন দিয়ে আপনি কি ঈশ্বরকে খুঁজতে এবং তাঁর কাছে পৌঁছাতে চান ? কিন্তু মনে হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে তিনি আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন আর আপনি তাঁকে খুঁজে পাচ্ছেন না ।
আপনি শুধুমাত্র একাই খুঁজছেন , তা নয় । প্রত্যেক জায়গায় , প্রত্যেক যুগে মানুষ ঈশ্বরকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে । প্রায় দুই হাজার বছর আগে একজন যুব নেতা যীশুর কাছে দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করেছিল , “ গুরু , অনন্ত জীবন পাবার জন্য আমাকে ভাল কি করতে হবে ?” ( মথি ১৯ : ১৬ পদ ) । পঞ্চাশত্ত্বমীর দিন যখন পিতর প্রচার করছিলেন , তখন লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছিল , “ আমরা কি করব ?” অথবা , অন্যভাবে বলা যায়, - আমরা কি করে ঈশ্বরকে পেতে পারি ? দাঙ্গা - হাঙ্গামা পূর্ণ এই অশান্ত পৃথিবী আজ নীরবে কাঁদছে - , কাঁদছে ঈশ্বরকে আর তাঁর ভালোবাসাকে পাবার জন্য ।
সারা বিশ্বের সব মানুষের একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে ঈশ্বরকে পাবার জন্য চেষ্টা করা । আমাদের হৃদয় ততক্ষণ অশান্ত থাকছে যতক্ষণ না তা ঈশ্বরে বিশ্রাম পাচ্ছে । ঈশ্বরকে পাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে চলা ছাড়া আর কোনভাবেই আত্মার বিশ্রাম ও মনের শান্তি অনুভব করা যায় না । যীশু বলেছেন , “ তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ , তোমরা সবাই আমার কাছে এসো , আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব ।” ( মথি ১১ : ২৮ পদ ) ।
ঈশ্বরকে আমাদের প্রয়োজন , এটা ভালোভাবে বুঝতে পারি , যখন অনুভব করি যে ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর জন্যই সৃষ্টি করেছেন । আমরা কেউই দেখতে এক রকম না । (আমরা কেউই একরকম কথা বলি না ‘ চিন্তা করি না , একভাবে দেখি না বা আচরণও করি না ) ; তথাপি আমরা সবাই , - ঈশ্বরের মতো করে , তাঁর সঙ্গে মিল করেই সৃষ্ট । পবিত্র বাইবেলের আদিপুস্তক ১ : ২৬ পদ পড়ুন । আমাদের আত্মা জীবিত এবং ঈশ্বরের অংশ বিশেষ , যা তার স্রষ্টার সাথে মিল রাখতে সর্বদা ইচ্ছুক । “ হরিণ যেমন আকুল ভাবে জলের ধারা কামনা করে , তেমনি করে হে ঈশ্বর , আমার প্রাণ তোমার জন্য আকুল হয়ে আছে । ঈশ্বরের জন্য , জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য আমার প্রাণে পিপাসা জেগেছে ; “ ( গীতসংহিতা ৪২ : ১ - ২ পদ ) । হ্যাঁ, জীবন্ত ঈশ্বরই শুধুমাত্র মানুষের জীবন্ত আত্মাকে খুশি করতে পারেন !
দায়ূদ যখন ঈশ্বরকে পেয়েছিলেন , তখন তিনি তার অন্তরের অনুভূতির কথা সংক্ষেপে বলেছিলেন , “ আমার অভাব নেই ।” ( গীতসংহিতা ২৩ : ১ খ পদ ) । তার প্রয়োজন মিটে গিয়েছিল । তিনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং জেনেছিলেন যে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে মিলনই শুধুমাত্র শান্তি আনতে পারে । “ যাদের অন্তরে পিপাসা আছে তিনি তাদের পিপাসা মেটান , আর যাদের অন্তরে খিদে আছে ভালো ভালো জিনিস দিয়ে তিনি তাদের তৃপ্ত করেন ।” ( গীত সংহিতা ১০৭ : ৯ পদ )।
ঈশ্বর সত্যিই আছেন । যদিও আপনি তাঁকে দেখতে পান না , বুঝতে পারেন না অথবা , খুঁজে পান না । অপরিবর্তনীয় সত্যকে এতটুকু পরিবর্তন করা যায় না কারণ তিনি ছিলেন , তিনি আছেন এবং তিনি থাকবেন । একজন ঈশ্বর অবশ্যই আছেন ! এই নিয়ে সন্দেহ করবেন না । যদি ঈশ্বরকে চান , তাহলে এটাই মূল বিষয় যে তিনি আছেন তা আপনি বিশ্বাস করেন এবং তাঁর ভালবাসায় পূর্ণ আস্থা রাখেন ।
ঈশ্বর কোথায় ? তিনি যখন অন্য জায়গায়, তখন কি এখানে থাকতে পারেন ? ঈশ্বর সব জায়গায় আছেন ! যাকোবের কুয়ার কাছে যীশু একজন স্ত্রীলোককে বলেছিলেন , - ঈশ্বর হচ্ছেন আত্মা এবং তাঁকে সর্বত্র ও সব সময় পাওয়া যায় । নাগালের বাইরে স্বর্গের কোন দূরবর্তী স্থানে তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখেন না । গীর্জাতে , সমাজঘরে , বা মন্দিরের ভেতরেও তিনি নিজেকে সীমিত করে রাখেন না । পাহাড়ে , উপত্যকায়, আকাশে , সাগরে , আপনার বাড়ীতে অথবা যে কোন স্থানেই আপনি তাঁকে পেতে পারেন । এই মুহূর্তে তিনি আপনার চারপাশে আপনাকে ঘিরে আছেন ।
ঈশ্বরের লোক যাকোব বলেছিলেন , “ তাহলে সদাপ্রভু নিশ্চয়ই এই জায়গায় আছেন অথচ আমি তা বুঝতে পারি নি ।” ( আদি পুস্তক ২৮ : ১৬ খ পদ ) । প্রায়ই আমরা আমাদের জাগতিক বিষয়ে এত মগ্ন হয়ে যাই যে , যদিও ঈশ্বর আমাদের কাছাকাছি থাকেন - তাও আমরা বুঝতে পারি না । ঈশ্বরের সাথে নাটকীয় সাক্ষাৎকার প্রত্যাশা করি বলে আমরা তাঁর ‘ শান্ত , মৃদু স্বর ‘ শুনতে পাই না এবং তাঁর মৃদু আকর্ষণও অনুভব করতে পারি না । আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে ; দেখার ও শোনার চেষ্টা করতে হবে , এবং তখনই বিশ্বাসে আমরা দেখব, শুনবো এবং বুঝতে পারব ।
ঈশ্বরকে খোঁজার জন্য আপনাকে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতে হবে না । তিনি নিজেকে আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখেন না , কিন্তু তিনি নিজেই আপনাকে খুঁজছেন । আপনি তাঁকে পাবার জন্য খুঁজতে শুরু করার অনেক আগে থেকে তিনিই আপনাকে তাঁর অনন্তকালীন পরিবারের সদস্য দেখতে চান , যেখানে আপনাকে আপন করে ভালবাসতে ও দেখাশোনা করতে পারেন । আপনি কি নিঃস্ব , অশান্ত , দোষী , হারানো , অথবা মৃত্যু ভয়ে ভীত ? এ সেই ঈশ্বর , যিনি আপনাকে ডাকছেন ; কারণ তিনি চান না যে আপনি হারিয়ে যান । হতে পারে , এটা আপনার জন্য তাঁর প্রথম অথবা শেষ আহ্বান তিনি জানাচ্ছেন । “ আহা , আজ যদি তোমরা তাঁর কথায় কান দাও ! ……………. তোমাদের অন্তর তোমরা কঠিন করো না ; “ (গীত সংহিতা ৯৫ : ৭ - ৮ পদ ) ।
তাঁকে পাবার জন্য ঈশ্বর নিজেই এক মহান প্রেমের পথ তৈরী করেছেন । “ ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে , তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন , যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায় ।” ( যোহন ৩ : ১৬ পদ ) ।
ঈশ্বরের কাছে যাবার জন্য খ্রীষ্টই হচ্ছেন একমাত্র পথ ! যীশু বলেছেন , “ আমিই পথ , সত্য আর জীবন । আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না ।” ( যোহন ১৪ : ৬ ক পদ ) । জেলরক্ষী যখন পৌলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন , “ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আমাকে কি করতে হবে ? “ প্রেরিত পৌল উত্তর দিয়েছিলেন , “ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করুন , তাহলে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন ।” ( প্রেরিত ১৬ : ৩০ - ৩১ পদ ) ।
উদ্ধার পাবার বিষয়ে নীকদীম খোঁজ করেছিলেন । তখন যীশু বলেছিলেন , “ নতুন করে জন্ম না হলে কেউ ঈশ্বরের রাজ্য দেখতে পায় না ।” ( যোহন ৩ : ৩ খ পদ ) । নীকদীমের মত আপনার প্রশ্নও হতে পারে - ‘ এটা কি করে সম্ভব ? ‘ হ্যাঁ, নতুন জন্মের অর্থ হচ্ছে , ঈশ্বরের পুত্র যীশুকে আপনার উদ্ধার কর্তা বা পরিত্রাণ কর্তা হিসাবে গ্রহণ করা । ক্রুশের উপরে যীশুর মৃত্যুকে বিশ্বাস করলে , তাঁর রক্ত আপনাকে সমস্ত পাপ থেকে শুচি করবে । অবশ্য নিজ পাপের জন্য আপনাকে অনুতপ্তও হতে হবে , আর সব পাপ পরিত্যাগ করতে হবে । এখন , আপনার পাপের ক্ষমা চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন এবং খ্রীষ্ট যীশুকে আপনার জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রভু বলে স্বীকার করুন । “ যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন , “ ( ১ যোহন ১ : ৯ ক পদ ) ।
সকলেই পাপ করেছে । “ নির্দোষ কেউ নেই , একজনও নেই “ ( রোমীয় ৩ : ১০ খ পদ ) । ঈশ্বর পবিত্র , তাই তিনি পাপ ঘৃণা করেন । ঈশ্বরের কাছে আসার জন্য আমাদের অবশ্যই পবিত্র বাইবেলে উল্লেখিত পাপ সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে । ভাল জীবন - যাপন করলেও যথেষ্ট হবে না বা এতে পাপের ক্ষমা হবে না । আমাদের অবশ্যই অনুতাপ করতে হবে এবং পাপের পথ থেকে ফিরে আসতে হবে ।
সত্যি করে ঈশ্বরকে পেতে হলে আপনার জীবনের যে কোনো জিনিসের চেয়েও বেশি করে ঈশ্বরকে চাইতে হবে । আপনাকে অবশ্যই আপনার জীবন ও জীবনের সাথে জড়িত সব বিষয়ে ঈশ্বরের সাথে পূর্ণভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে । নিজেকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে হবে , ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে । ঈশ্বরের কাছে পাপ যেমন ঘৃণার যোগ্য , আপনার জীবনেও পাপ ঘৃণার যোগ্য হতে হবে ।
আপনি কি সত্যিই ঈশ্বরকে পেতে এবং তাঁর সাথে চলতে চান ? পছন্দ শুধুই আপনার । এতে আপনাকে কিছুই হারাতে হবে না বরং অনেক কিছু লাভ করবেন । যদি আপনি একটু থেমে মুখ ঘুরান এবং ঈশ্বরের দিকে ফেরেন , তাহলেই আপনি তাঁকে পাবেন । যে আত্মা তার উদ্ধার কর্তাকে খোঁজে ও যে উদ্ধারকর্তা আত্মা খুঁজেন , তাদের মিলন হবেই । সকল জীবনের উৎস ঈশ্বরকে যখন আপনি পাবেন , তখন তিনি আপনাকে এক নতুন জীবন দেবেন , নতুন হৃদয় দেবেন আর ঈশ্বরকে অনুসরণ করার একান্ত ইচ্ছাও দেবেন । “ তার পুরানো সবকিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে ।” ( ২ করিন্থীয় ৫ : ১৭ খ পদ ) ।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন । তাঁর কাছে ক্ষমা চান । তাঁকে বলুন , আপনি আপনার পাপের ভারে ক্লান্ত এবং তাঁকে অনুসরণ করতে চান , যেখানে তিনি আপনাকে পরিচালিত করবেন । ঈশ্বরের শান্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে যদি আপনি বাধ্য থেকে তাঁর অনুসরণ করেন ।