‘তিনি ( ঈশ্বর ) আমাকে বললেন, “আমোষ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ ?” উত্তরে আমি বললাম, একটা ওলন দড়ি ।” তখন প্রভু বললেন, “ আমার লোক ইস্রায়েলর মধ্যে আমি একটা ওলন দড়ি ( বিচার চিহ্ন ) রাখছি ; আমি আর তাদের রেহাই দেব না ।” ( আমোষ ৭ : ৮ পদ ) । ওলন দড়ি হচ্ছে রাজমিস্ত্রীর কাজে ব্যবহৃত একটা মাপের জিনিস যা দিয়ে সে তার কাজের ভুল ধরতে পারে । সরলভাবে সে তার কাজ করলেও কিন্তু ভুলের হাত থেকে রেহাই পায় না । ঈশ্বরের বাক্য রূপ ওলনদড়ি বা বিচার - চিহ্ন দিয়েও তেমনি আমাদের জীবন ও বিশ্বাস সঠিক প্রমাণিত হওয়া দরকার ।
সরল হলেও ভুল হয়
জনপ্রিয় একটা ধারণা : ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন বা না করেন, তাতে কিছু যায় আসে না, যদি আপনি সরল বা আন্তরিক হন ।’ যাই হোক, বিশ্বাসে অবশ্যই আপনাকে সরল বা আন্তরিক হতে হবে , যেন সঠিক কাজটি করতে পারেন । সরল বা আন্তরিক একজন লোকের সব কাজেই আমাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ থাকে । এমন লোক তার দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য জীবন দিতেও ইতস্তত করে না । কিন্তু সরল বা আন্তরিক হওয়াই যথেষ্ট নয় ।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটান পৌর এলাকার একটা ওষুধের দোকানের ওষুধ বিক্রেতা প্রেসক্রিপশন মতই বেরিয়াম সালফেট দিয়ে ফেলেছিল । এই দুটি ওষুধের নামের মধ্যে মাত্র একটা শব্দের পার্থক্য ছিল । আবার দুটি ওষুধের একটি হল চিকিৎসার জন্য, অন্যটি মারাত্মক বিষ । যে মহিলা এই ভুল ওষুধ খেয়েছিলেন, তিনি মারা গেলেন । ওষুধ বিক্রেতা সরল বা আন্তরিকভাবেই মনে করেছিল, প্রেসক্রিপশন মোতাবেক সে ঠিক ওষুধই দিয়েছে । জীবন - মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের মারাত্মক ভুলের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হওয়া উচিত ।
আর একজন মহিলা নিজের উপর পূর্ণ আস্থা নিয়েই তার দেরাজ থেকে একটা ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন । সেই ওষুধে তিনি মারা যান, কারণ তা কোনভাবে বিষে পরিনত হয়েছিল । আপনার সরলতা, বা আপনার আন্তরিকতা এরকম ক্ষেত্রে আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে না, যদি আপনি ভুল বিশ্বাস করেন । ভুল করে বিষ খাওয়ার মত ভুল বিশ্বাস করলে আমাদের আত্মার অনন্ত মৃত্যু হবে ।
সত্যিই যদি আপনি সরল বা আন্তরিক হন, আপনি কি বিশ্বাস করেন বা না করেন - তাতে কিছু যায় আসে না’ এ কথার মানে - যে কোন বিশ্বাসই সঠিক , এবং সেই বিশ্বাস আপনাকে স্বর্গে নিয়ে যেতে পারবে - , যদি আপনি সরলতার বা আন্তরিকতার সাথে তা অনুসরণ করেন । আসলে কিন্তু একথা সত্যি না !
প্রেরিত পৌল যখন খ্রীষ্টিয়ানদের অত্যাচার করতেন, তখন প্রবল উৎসাহ নিয়ে আন্তরিকতার সাথেই করতেন । এরকম কতদিন ধরে, কত আন্তরিকতার সাথে তিনি অত্যাচার চালিয়ে যাবেন সেটা বড় বিষয় নয়, কিন্তু তিনি নিজে তো হারিয়ে যাচ্ছিলেন । এক্ষেত্রে এক নতুন হৃদয়, এক নতুন জন্মের অভিজ্ঞতা পাবার প্রয়োজন তার ছিল । ( বাইবেলে প্রেরিত ৯ অধ্যায় দেখুন ) ।
সেই পাঁচজন বোকা মেয়ে গুলো খুবই আন্তরিকতার সাথে বিয়ের ভোজে এসেছিল এবং তারা বলেছিল, “ প্রভু , প্রভু, দরজা খুলে দিন ।” উত্তরে কিন্তু বর বলেছিলেন , “ আমি তোমাদের চিনি না ।” ( মথি ২৫ : ১ - ১৩ পদ দেখুন ) ।
বালদেবের ভাববাদীরা খুবই আন্তরিক ভাবেই তাদের দেবতাকে কার্মেল পাহাড়ে আগুন নামিয়ে উত্তর পাবার জন্য ডাকাডাকি করছিল । এই কাজে তারা এতই আন্তরিক ছিল যে, তারা চিৎকার করে ডাকছিল ; এমন কি ছুরি , কাটা দিয়ে নিজেদের ক্ষত বিক্ষত করে রক্তাক্ত করে তুলেছিল । এতেও তারা কিন্তু কোন উত্তর পায়নি । ( ১ রাজাবলি ১৮ অধ্যায় দেখুন ) ।
অনেক লোকই খুবই সরলতার সাথে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাদের কাঠ বা পাথরের তৈরী প্রতিমার কাছে পূজা করে থাকে । কতজন তীর্থ যাত্রা করে অথবা কাঁটার বিছানায় ঘুমায় । কেউ কেউ আবার তার জানা বিশ্বাস সঠিক মনে করে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয় । সরলতার জন্য তাদের ত্যাগ স্বীকার ও কষ্ট - ভোগের ইচ্ছা কি প্রমাণ করে যে তাদের বিশ্বাস সত্য ?
যীশু বলেছেন, “ যারা আমাকে ‘ প্রভু , প্রভু ‘ বলে তারা প্রত্যেকে যে স্বর্গ - রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয় , কিন্তু আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সেই - ই ঢুকতে পারবে ।” ( মথি ৭ : ২১ পদ ) । খুবই আন্তরিকতার সাথে অনেকে ভাবে যে তাদের জন্য স্বর্গের দরজা খোলা ; কারণ তারা প্রভুর নামে ভাববাণী বলেছে, প্রভুর নামে মন্দ আত্মা ছাড়িয়েছে এবং আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেছে । কিন্তু প্রভু বলছেন , “ আমি তোমাদের চিনি না । দুষ্টের দল ! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও ।” ( মথি ৭ : ২৩ খ পদ ) ।
উদ্ধার বা রক্ষা পেতে হলে প্রভু যীশুকে জানা ও তাঁর ইচ্ছা অনুসারে চলা দরকার । রক্ষা পেতে হলে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনে সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে । আর তখন ঈশ্বরের বাক্য নির্ভুলভাবে পথ দেখাবে যতবার আপনি শাস্ত্র থেকে সত্য খুঁজবেন । বাইবেলে লেখা আছে, “ তোমার বাক্য আমার পথ দেখাবার বাতি , আমার চলার পথের আলো ।” ( গীত সংহিতা ১১৯ : ১০৫ পদ ) । আবার বলা হয়েছে , “ আপনারা পবিত্র শাস্ত্র খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন , কারণ আপনারা মনে করেন তার দ্বারা অনন্ত জীবন পাবেন । কিন্তু শাস্ত্র তো আমারই বিষয়ে সাক্ষ্য দেয় ; “ ( যোহন ৫ : ৩৯ পদ ) ।
বাইবেল স্পষ্টভাবে এ কথা শিক্ষা দেয় যে , একজন খ্রীষ্টানুসারী অবশ্যই তার জীবনে ক্রুশ - বহনকারী , আত্মত্যাগী , নিঃস্বার্থ এবং নম্র হবে । এই শিক্ষাকে অবহেলা করলে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বুঝতে আমরা দুঃখজনক ভাবে ভুল করব ।
আমরা যখন অনুতাপ করি, তখন যীশু আমাদের হৃদয়ে আসেন এবং তাঁর আত্মা আমাদের নতুন পথের নির্দেশ দেয় । তাঁর আত্মা আমাদের অন্তরে সাক্ষ্য দেন যে , আমরা তাঁর সন্তান । “ কারণ যারা ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনায় চলে তারাই ঈশ্বরের সন্তান ।” “পবিত্র আত্মাও নিজে আমাদের অন্তরে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান ।” ( রোমীয় ৮ : ১৪, ১৬ পদ ) ।