দেশের কোন নেতার সাথে অথবা কোন বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে কথা বলতে আপনি কি পছন্দ করেন ? আবার, তাদের কাউকে আপনার বাসায় পেতে কেমন লাগবে ? আমরা অনেকেই এমন সুযোগ পাই না । কিন্তু আপনি কি জানেন, এদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একজনের সাথে আপনি কথা বলতে পারেন ? আবার, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আপনি আপনার বাসায়ও পেতে পারেন !
আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন যে, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতা ঈশ্বরের কথাই আপনাকে বলছি । হ্যাঁ , এটা আসলে সত্যি - তিনি চান যেন আমরা সবাই তাঁর সাথে কথা বলি । আমরা আমাদের ধন্যবাদ, বিনতি ও হতাশা নিয়েও তাঁর কাছে আসতে পারি । আর এটাই হল প্রার্থনা ।
আপনি হয়তো প্রার্থনা করতে চেষ্টা করেছেন - তখন আপনার কেমন মনে হয়েছে ? প্রার্থনার পরেও কি আপনার অনেক প্রশ্ন ছিল ? এই রকম করে ভাবাটা স্বাভাবিক, কারণ যীশুর শিষ্যরাও যীশুকে বলেছিলেন যেন তিনি তাদের প্রার্থনা করতে শিখান ।
প্রথম প্রথম প্রার্থনা করতে হয়তো আপনার বেশ অদ্ভুত মনে হতে পারে, কারণ আপনি তো মনে করছেন যে, কেউ আপনার কথা শুনছে না । শয়তানও এটাই আপনাকে বিশ্বাস করাতে চাইবে যেন আপনি আর প্রার্থনা করতে চেষ্টা না করেন । কিন্তু বাইবেল এই সত্য আশ্বাস দেয় যে, আপনি যেখানেই থাকেন না কেন, যে কোন সময়ই ঈশ্বর আপনার বিনীত অনুরোধ শোনেন ।
“ঈশ্বরের উপরে আমাদের এই নিশ্চয়তা আছে যে, তাঁর ইচ্ছামত যদি আমরা তাঁর কাছে কিছু চাই তবে তিনি আমাদের কথা শোনেন ।” ( ১ যোহন ৫ : ১৪ পদ ) ।
আপনি হয়তো নিজে নিজে প্রশ্ন করেন - আমি কার কাছে প্রার্থনা করব ? আচ্ছা ধরা যাক্, আপনি একটা ছেলের বাবা এবং ছেলেটির কিছু প্রয়োজন । তাহলে এই প্রয়োজনের সময় সে কার কাছে যাবে ? এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে আপনি চাইবেন, আপনার ছেলে আপনার কাছে চায় ? ভাল, ঈশ্বরের ইচ্ছাও ঠিক একই রকম । তিনিও আমাদের ভাল ভাল জিনিস দিতে চান । আর সবার উপরে তিনি আমাদের পাপের ক্ষমা ও অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা দিতে চান । তাই আমাদের অনুরোধ সমস্যা ঈশ্বরের কাছে আনা উচিত । যীশু আমাদের তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করতে বলেছেন । মথি ৬ : ৬ পদ পড়ুন। এভাবেই সবচেয়ে ভাল, জানা প্রার্থনা শুরু হয়েছে, হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, “ ( মথি ৬ : ৯ পদ ) । বাইবেল আমাদের এভাবেই শেখায় যেন আমরা সরাসরি আমাদের স্বর্গীয় পিতার সাথে কথা বলি ।
অনেকে একথা বলে থাকে, ‘ আমি তো জানি না, কোন্ কোন্ শব্দ ব্যবহার করে এবং কেমনভাবে আমি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে প্রকাশ করব?’ আমরা হয়তো মনে মনে এও বলি, ঈশ্বর শুনতে পান এমন সব বিশেষ শব্দ আমাদের ব্যবহার করা উচিত । অথবা এও মনে করি - অনেক সুন্দর সুন্দর কথা পরিচ্ছন্নভাবে বারবার না বললে আমরা ঈশ্বরের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারব না । বাস্তবিক বাইবেলও আমাদের জন্য প্রার্থনার বিভিন্ন উদাহরণ দেয় যা সহজ ও সংক্ষিপ্ত; ঈশ্বরের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ।
“ঈশ্বরের উপরে আমাদের এই নিশ্চয়তা আছে যে, তাঁর ইচ্ছামত যদি আমরা তাঁর কাছে কিছু চাই তবে তিনি আমাদের কথা শোনেন ।” ( ১ যোহন ৫ : ১৪ পদ ) ।
উদাহরণ স্বরূপ, একজন পাপী এভাবে প্রার্থনা করেছিল, “ হে ঈশ্বর, আমি পাপী ; আমার প্রতি করুণা কর ।” ( লূক ১৮ : ১৩ পদ ) । তেমনি একজন পাপী ভগ্ন ও অনুতপ্ত হৃদয়ে প্রার্থনা করেছিল , “যীশু , আপনি যখন রাজত্ব করতে ফিরে আসবেন তখন আমার কথা মনে করবেন ।” ( লূক ২৩ : ৪২ পদ ) । তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বর প্রার্থনার জন্য বিশেষ ধরনের বাক্যের প্রয়োজন বোধ করেন না । বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অনেকে প্রার্থনা করেছে, যা বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে; তার দু’টো কখনোই একরকম নয় ।
অনেকেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে কিছু চেয়ে, তা না পাওয়াতে হতাশ হয়ে পড়ে । অবশ্য দেখতে হবে, তারা কি চেয়েছিল ? অনেক সময় আমরা কিছু চেয়ে পাই না , কারণ তা আমাদের উপকারে আসবে না । একটি তিন বছরের বাচ্চা ছেলে যদি একটা ধারালো ছুরি চায়, তাহলে কোন বুদ্ধিমতী মা তা দেবেন কি ?
প্রার্থনার সময় আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত ? কারণ, শুধুমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহে আমরা তাঁর সামনে আসতে পারি ; সেজন্য তাঁর সামনে আমাদের নত থাকা উচিত । পিতা ঈশ্বরের কাছে সরল ও আন্তরিকভাবে আপনি যা অনুভব করেন ও আপনার যা প্রয়োজন, তা সরাসরি বলুন । আর বিশ্বাস করুন যে তিনি আপনার নিবেদন শুনেছেন । আমরা অবশ্যই যীশুর নামে প্রার্থনা করব , কারণ তিনি বলেছেন, “তোমরা আমার নামে যা কিছু চাইবে তা আমি করব, যেন পিতার মহিমা পুত্রের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয় ।” ( যোহন ১৪ : ১৩ পদ ) ।
বারবার প্রার্থনা করুন । আর যখনই প্রার্থনা করবেন, বাইবেল যেভাবে বলেছে ঠিক সেইভাবে করবেন যেন ঈশ্বরকে আপনি ভালোভাবে জানতে পারেন ও অনেক আশীর্বাদ পান । যদি আপনার কাছে বাইবেল থাকে, তাহলে প্রার্থনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি পড়ুনঃ মথি ৬ : ৫ - ১৩ এবং ৭ : ৭ - ১১ পদগুলি পড়ার মধ্য দিয়ে আপনার বাইবেল পাঠ করা শুরু করতে পারেন ।