পবিত্র বাইবেলে আমরা পড়ি, “ তারপর আমি দেখলাম, ছোট - বড় সব মৃত লোকেরা সেই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । এর পর কতগুলো বই খোলা হল । তার পরে আর একটা বই খোলা হল । ওটা ছিল জীবন - বই । এই মৃত লোকদের কাজ সম্বন্ধে সেই বইগুলোতে যেমন লেখা হয়েছিল সেই অনুসারেই তাদের বিচার হল” ( প্রকাশিত বাক্য ২০ : ১২ পদ ) । এই অংশটি প্রমাণ করে যে ঈশ্বর সব কিছু তথ্য - প্রমাণ লিখে রাখেন ।
আমেরিকার মেরিল্যান্ড শহরের এক তরুণ যুবক যোশূয়া হ্যারিস পোর্টরিকোতে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন । এক রাতে তিনি একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর তার বিশ্বস্ততার অভাবের জন্যই দোষারোপ করতে এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন । এই স্বপ্ন তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যীশুর জীবন পরিবর্তনকারী ক্ষমতা এবং তার রক্তের কথা । এই স্বপ্নটি আমরা আপনাদের কাছে বলছি ।
***
একটি কামরা
ঐ স্থানে, তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বপ্নের ঘোরে আমি নিজেকে একটা কামরার মধ্যে আবিষ্কার করলাম । কামরাটির মধ্যে এক পাশের দেয়াল জুড়ে অজস্র ফাইল ভর্তি ছোট ছোট কার্ডের তালিকা, যা কোন আলাদা বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ নয় । একটা লাইব্রেরীতে যেমন বিষয় বা লেখক ভিত্তিক বইয়ের শিরোনাম অক্ষর অনুযায়ী সাজানো থাকে, ঠিক অনুরূপ তালিকাও এখানে করা হয়েছে । ফাইলগুলো মাঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত তাক ভরা, মনে হয় যেন অন্য পাশে অন্তহীন লম্বা হয়ে চলে গেছে, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন শিরোনাম । আমি নিজেকে ফাইল ভর্তি দেয়ালের তাকের কাছে নিয়ে গেলাম ; আর প্রথমেই যেদিকে আমার চোখ গেল , সেখানে লেখা, “ আমি যে মেয়েগুলোকে পছন্দ করেছি ।” আমি ফাইলটি খুলে ভেতরের কার্ড গুলো একের পর এক সরিয়ে দেখতে লাগলাম । কিন্তু প্রত্যেকটা কার্ডে লেখা নাম গুলো চিনতে পেরে আমি ঘাবড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফাইলটি বন্ধ করে দিলাম ।
কেউ না বললেও আমি বুঝতে পারছিলাম, এখন আমি ঠিক কোথায় আছি । এই প্রাণহীন কামরাটির মধ্যে রাখা ছোট ফাইলগুলোতে রয়েছে আমার দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনের ঘটনা বলির তালিকা সূচি । আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের ছোট - বড় সকল কাজের হুবহু বিবরণ এখানে লেখা হয়েছে, যার বিশদ বর্ণনা আমার স্মরণশক্তিতে ধরে রাখা সম্ভব ছিল না ।
আমি যখন একটার পর একটা ফাইল খুলছি আর সেখানে লেখা বিষয়গুলো দেখছি ; তখন এক আশ্চর্য আর কৌতূহল অনুভব করতে করতে আমি খুব ভীত হলাম । কিছু কিছু বিষয় আমার জন্য আনন্দ আর মধুর স্মৃতি; আর অন্যান্য বিষয়গুলোতে এমন গভীর দুঃখ ও লজ্জাজনক অনুভূতি অনুভব করলাম , আর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম - কেউ আবার এসব দেখছে কি - না ! একটা ফাইলের নাম লেখা “ বন্ধু - বান্ধব “ এবং তারপরেই লেখা রয়েছে, “ যে সব বন্ধু - বান্ধবের সাথে আমি বেইমানি করেছি ।”
পরবর্তী শিরোনাম গুলো পার্থিব বিষয় বস্তু থেকে শুরু করে সরাসরি অপার্থিব বিষয় বস্তুতে চলে এসেছে । “আমি যে বইগুলো পড়েছি,” “ আমি যে মিথ্যা কথাগুলো বলেছি,” “ আমি যাদের সান্তনা দিয়েছি,” “যে কৌতুক শুনে আমি হেসেছি ।” কিছু কিছু কথা ছিল যথার্থ উচ্ছ্বাসে ভরাঃ “ যে বিষয় নিয়ে আমি আমার ভাইদের প্রতি তর্জন - গর্জন করেছি ।” অনেকের বিষয়ে আমি হাসতে পারি নাইঃ “যে বিষয়গুলো আমি এক নিশ্বাসে বিড় বিড় করে বাবা - মাকে বলেছি ।” বিষয়গুলো দেখতে দেখতে হতবাক না হয়ে আমার উপায় ছিল না । আমার ধারণারও বাইরে অনেক কার্ড দেখছিলাম । আবার কোন কোন স্থানে ধারণার চেয়েও কম ছিল ।
যে বিপথগামী জীবন আমি কাটিয়েছি, তার স্তুপ দেখে আমি বিমুঢ় । এই হাজার হাজার বা বলা চলে লক্ষ লক্ষ ঘটনার তালিকা তৈরী করার সময় কি আমার এই বিশ বছরের জীবনে সম্ভব ছিল ? কিন্তু প্রত্যেকটি লেখা ঘটনা তালিকা এই সত্য প্রকাশ করছে যে, সবই আমার নিজের হাতের লেখা এবং আমার নিজের হাতেই নাম স্বাক্ষর করা ।
আমি যখন আর একটা ফাইল টেনে বের করলাম , যেখানে লেখা “যে গানগুলো আমি শুনেছি“ আমি বুঝলাম ফাইলটি বিষয় বস্তুতে অনেক বড় হয়ে গেছে । কার্ডগুলো শক্তভাবে ঠেসে রাখা হয়েছে এবং দুই তিন গজ এগিয়ে গিয়েও আমি ফাইলের শেষ মাথা পাচ্ছিলাম না । লজ্জায় আমি ফাইলটি বন্ধ করে দিলাম ; শুধু গানের গুণগত মানের জন্য নয়, কিন্তু তার চেয়েও বেশি, যে প্রচুর সময় এই সব গান শুনে আমি নষ্ট করেছি, - যা এই ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আমি যখন আরও একটা ফাইলের কাছে আসলাম, যেখানে লেখা “কাম - লালসাপূর্ণ চিন্তা,” তখন আমার সারা শরীরে ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম । ফাইলটি মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ টেনে বের করলাম, কারন আমি দেখতে চাচ্ছিলাম না এটা কত বড় , এবং একটা কার্ড টেনে বের করলাম । লেখা বিষয়বস্তু ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেখে আমি ভীষণ ভয়ে কেমন শীত শীত অনুভব করতে লাগলাম । এমন মুহূর্তগুলো সেখানে লেখা হয়েছে যা চিন্তা করতে গিয়ে আমি অসুস্থ বোধ করলাম ।
হঠাৎ করে আমার মধ্যে একটা পশু সুলভ রাগ এসে গেল । একটা মাত্র চিন্তা আমার মনকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলঃ “ নিশ্চয়ই কার্ডগুলো এখন পর্যন্ত কেউই দেখে নাই ! আমাকে এগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে !” একটা কান্ডজ্ঞানহীন উন্মত্ততায় আমি ফাইলগুলো টেনে বের করতে শুরু করলাম । ফাইলের আকার এখন আর আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় । সবই এখন খালি করতে হবে এবং পুড়িয়ে ফেলতে হবে । কিন্তু যতই আমি ফাইলগুলো একপাশ থেকে টেনে হিঁচড়ে মেঝেতে ফেলতে চেষ্টা করতে লাগলাম ; একটা কার্ডও সস্থান থেকে সরাতে পারলাম না । মরিয়া হয়ে একটা কার্ড ছিড়তে গিয়ে দেখি তা লোহার মতন শক্ত ।
পরাজিত এবং চরম অসহায় হয়ে আমি খাঁজে রাখা ফাইলের দিকে ঘুরে গেলাম । দেয়ালের দিকে মাথা নুইয়ে বুক চিরে বড় দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসল । তারপর আমি দেখতে পেলাম শিরোনাম লেখা আর একটা ফাইল, “ যে লোকদের কাছে আমি সুসমাচার প্রচার করেছি ।” এই জায়গার হাতলটি বেশ চকচকে, এবং আশেপাশের হাতল গুলো থেকে সম্ভবত নতুন ও প্রায় অব্যবহৃত । এই হাতলটি ধরে টান দিতেই তিন ইঞ্চির বেশি বড় নয় এমন একটা বাক্স আমার হাতে এসে পড়ল । এক হাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ এই কার্ডগুলো আমি গুনতে পারলাম ।
তারপর, আমার চোখে জল এসে গেল । আমি কাঁদতে শুরু করলাম । আমার শরীরের গভীর থেকে ফোঁপানি বের হয়ে আসাতে আমার পেট পর্যন্ত ব্যথা হয়ে গেল , আর সারা শরীর কাঁপিয়ে দিল । আমি হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লাম আর কাঁদতে লাগলাম । আমি লজ্জায় কাঁদলাম ; সবকিছুর জন্য ভীষণ লজ্জায় কাঁদতে লাগলাম । ফাইলের সারিগুলো আমার চোখের জলের মধ্যে নদী হয়ে ঘুরতে লাগল । এই কামরাটার কথা এখন পর্যন্ত নিশ্চয়ই কেউ জানে না । আমি কামরাটা তালা বন্ধ করে চাবি লুকিয়ে রাখব ।
কিন্তু তারপর, চোখের জল মুছতেই আমি- , আমি তাঁকে দেখতে পেলাম । না, মাপ চাই ! তিনি না হলেই ভাল ! অন্তত এখানে নয় ! নাহ্, তিনি যীশু - আর কেউ নয় ।
আমি অসহায়ভাবে লক্ষ্য করছিলাম, যখন তিনি এসে ফাইলগুলো খুলে একটার পর একটা কার্ড পড়তে থাকলেন । তাঁর এই প্রতিক্রিয়া আমি সহ্য করতে পারছিলাম না । একটি মুহূর্তে তাঁর মুখের দিকে তাকালাম, আর দেখতে পেলাম - আমার চেয়েও গভীর দুঃখে ভরা তাঁর মুখ । আমার মনে হল, জেনে শুনেই সবচেয়ে বাজে বাক্সটার কাছে তিনি গেলেন । কেন তিনি এই সবগুলো পড়তে চাচ্ছেন ?
শেষে তিনি কামরার একপাশ থেকে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন । করুনায় ভরা চোখ মেলে তিনি আমার দিকে তাকালেন । এমন করুনার চাউনি দেখে আমার কোন রাগ আসল না । আমি আমার মাথা নুইয়ে ফেলে, হাত দিয়ে মাথা ঢেকে আবার কাঁদতে শুরু করলাম । তিনি হেঁটে আমার কাছে আসলেন, আর হাত বাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । তিনি তো আমাকে অনেক কিছুই বলতে পারতেন , কিন্তু একটা কথা না বলে শুধু আমার সাথে কাঁদতে লাগলেন ।
অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে ফাইলের দেয়ালের কাছে গেলেন । কামরার এক পাশ থেকে শুরু করে, একটার পর একটা ফাইল টেনে বের করে প্রতিটা কার্ডে আমার নামের উপরে তিনি তাঁর নাম স্বাক্ষর করতে লাগলেন ।
“ না !” আমি চিৎকার করে তাঁর দিকে ছুটে গেলাম । তাঁর হাত থেকে কার্ড টেনে ধরে আমি শুধু বলতে পারলাম, “ না, না !” এই কার্ডগুলোতে তাঁর নাম থাকা মোটেই উচিত না । কিন্তু এখানে - , উজ্জ্বল লাল, খুব গভীর - খুব জীবন্ত লেখা ফুটে উঠেছে । যীশুর নাম আমার নামটিকে ঢেকে দিয়েছে । আর তা লেখা হয়েছে, তাঁরই রক্তে ।
খুব আলতো করে তিনি আমার হাত থেকে কার্ডটা টেনে নিলেন । এক গভীর দুঃখের হাসি হেসে কার্ডগুলোতে একের পর এক স্বাক্ষর করতে থাকলেন । আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না , - মনে হয় কখনও বুঝতে পারব না কিভাবে এত তাড়াতাড়ি তিনি স্বাক্ষর করতে পারলেন । কিন্তু পর মুহূর্তে মনে হল-, আমি শুনতে পেলাম , শেষ ফাইলটা তিনি বন্ধ করলেন, এবং হেঁটে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন । তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে তিনি বললেন , “সব শেষ হয়েছে ।”
আমি উঠে দাঁড়ালাম, আর তিনি আমাকে নিয়ে কামরা থেকে বের হয়ে আসলেন । কামরার দরজায় কোন তালা নাই । কিন্তু লেখার মতন আরও কার্ড সেখানে রয়ে গেছে ।
……………………………………………..
আপনি কি কখনও ভেবেছেন , ঈশ্বর আপনার জীবনকে কিভাবে দেখেন ? যীশু আমাদের বলেছেন, “ লোকে যে সব বাজে কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রত্যেকটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে” ( মথি ১২ : ৩৬ পদ ) । যদি আমরা নিজেদের কাছে সরল হই, তাহলে দুঃখের সাথে আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করব যে, চিন্তায় ও কাজে আমরা ব্যর্থ । গোপনে জমা করে রাখা চিন্তা এবং গোপনে করা কাজের জন্য লজ্জায় আমাদের লাল হয়ে যাওয়া উচিত । বাইবেলের রোমীয় ২ :১৬ পদ এ কথা বলেছে যে “ ঈশ্বর যেদিন যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে মানুষের গোপন সব কিছুর বিচার করবেন সেই দিনই তা প্রকাশ পাবে ।” প্রেরিত পিতর প্রচার করেছিলেন, “ এই জন্য আপনারা পাপ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের দিকে ফিরুন যেন আপনাদের পাপ মুছে ফেলা হয়” ( প্রেরিত ৩ : ১৯ পদ ) । যীশু কি আপনার পাপ মুছে ফেলেছেন ? অথবা, আজও কি আপনার পাপ আপনাকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে ?
আপনি কি মুক্ত হতে চান ? আপনার অতীত চিন্তা এবং কাজগুলো কি বোঝার মত আপনাকে চেপে ধরেছে ? আমাদের হৃদয় ও আমাদের জীবনের জন্য আমাদের পাপগুলো ভারী বোঝার মতন । “যদি আমরা বলি আমাদের মধ্যে পাপ নেই তবে আমরা নিজেদের ফাঁকি দিই । তাতে এটাই বোঝা যায় যে , আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের সত্য নেই” ( ১ যোহন ১ : ৮ পদ ) । “পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু, কিন্তু ঈশ্বর যা দান করেন তা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন “ ( রোমীয় ৬ : ২৩ পদ ) ।
যীশু ক্ষমা দিতে চান । তিনি এই পৃথিবীতে আসলেন এবং সকল পাপীর জন্য তাঁর রক্ত ঝরালেন । উদ্ধার পরিকল্পনা এখন সম্পূর্ণ হয়েছে । আপনি কি এখন সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে চান ? “তাই ঈশ্বরের পুত্র যদি আপনাদের মুক্ত করেন তবে সত্যিই আপনারা মুক্ত হবেন” ( যোহন ৮ : ৩৬ পদ ) । ( গীতসংহিতা ৫১ অধ্যায় ) । এখনই যীশুর কাছে আসুন ! অনুতাপ করুন এবং আপনার পাপ স্বীকার করুন । “ যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না” ( ১ যোহন ১ : ৯ পদ ) । যীশুর উপরে নির্ভর করুন যেন তাঁর সাথে থেকে আপনি সন্তোষজনক জীবন পরিচালিত করতে পারেন । আপনার প্রতিদিনকার জীবনের চলার পথে তিনি আপনাকে নির্দেশ দিতে পারেন ।
একটি কামরা - স্বত্ব ১৯৯৫
নতুন মনোভাব / যোশূয়া হ্যারিস