মদ মাদক দ্রব্য লালসা অপরাধ জেলখানা হতাশা মৃত্যু
“ পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু “ ( রোমীয় ৬ : ২৩ পদ )
আসুন আমরা বাস্তবের সামনে দাঁড়াই । মদ, মাদকদ্রব্য এবং অনৈতিকতার মত ভয়ংকর রাক্ষস গুলো ঈশ্বরের মহৎ এবং সুন্দর সৃষ্টির জন্য হুমকি স্বরূপ হয়েছে এবং সৃষ্টিকে ধ্বংস করেছে । ঠিক যেমন বিরাটাকার অজগর ; যা ছোট বড় সকলকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয় এবং গিলে ফেলে ।
আজকের সমাজে একটি মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করেছে । মদ পান, মাদক দ্রব্য গ্রহণ এবং অনৈতিকতার অভিশাপ অনেক লোককে হাল বিহীন নৌকার মতন ভাসিয়ে নিচ্ছে, যা কোন ভাবে থামানোর উপায় নাই এবং অনন্তকালীন ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে । লোকেরা দ্রুততার সাথে তাদের বন্ধুদের দ্বারা, অথবা তাদের যোগাযোগ মাধ্যমে, অর্থাৎ পত্র-পত্রিকা, খবরের কাগজ এবং টেলিভিশন প্রচার মাধ্যমে এইসব কু - অভ্যাস দ্বারা প্রভাবান্বিত হচ্ছে । মনটা তখন এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছে প্রচন্ড আঘাত হানে যে দ্বিধা - দ্বন্দ্ব এবং নিরাশায় তা জাগতিক ও আত্মিক অবনতির কারণ হয় ।
কে এই অসম্মানজনক নৈতিক আচার-আচরণের ভার নিজের কাঁধে বইতে পারে ? তরুণ প্রজন্ম ? তা নিশ্চয়ই ঠিক নয় । অনেক মা-বাবা তাদের নিজেদের অধার্মিক জীবন - যাপনের দ্বারা তাদের তরুণ প্রজন্মকে পাপ চরিতার্থ করতে অনুমোদন দেয় । মা - বাবা এমন অসতর্ক যে তাদের কলুষিত আবেগকে দমন করতে না পেরে তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে মদখোর ও নেশাখোরদের ধ্বংসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । এভাবেই ঈশ্বরীয় নৈতিক আদর্শ অসাবধানবশত অবহেলা করা হয় । একটি প্রবল আর্ত চিৎকার ঈশ্বরের দিকে ধ্বনিত হওয়া উচিত - কিভাবে আমরা নিজেদের এবং আমাদের ছেলে মেয়েদের রক্ষা করতে পারি ?
মা - বাবার, শিক্ষকের, বা প্রফেসরদের শিথিলতার কারণে মদ পান করা বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ উৎসাহিত এবং সহনীয় হয়, যার ফলে আমাদের পরিবার, স্কুল এবং কলেজগুলোতে আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় গুণী নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না । স্কুলের ভেঙ্গে পড়া নৈতিক অবস্থা আমাদের আতঙ্কিত করে দেয় । শিক্ষক এবং প্রফেসরগণ মাত্র কিছুদিন আগেও তাদের ছাত্র - ছাত্রীদের নিম্নমানের নৈতিক আচার-আচরণের অনুমোদন করার জন্য উদারতা ও ক্ষমাশীলতার মনোভাব দেখাতে গিয়ে বরখাস্ত হতেন ।
মদ পান জনজীবনের আদর্শকে চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, যা বিচার শক্তিকে নস্যাৎ করে, চরিত্র এমন কি জীবনও ধ্বংস করে দেয় । এটা মানুষের জীবনে আশীর্বাদ হিসাবে দেওয়া ঈশ্বরের পবিত্র বিধানস্বরূপ পরিবারকেও ভেঙ্গে ফেলে এবং বিনাশ করে ।
মদ পানের বিপদের সাথে আবার যুক্ত হয়েছে অবৈধ মাদক দ্রব্য ব্যবহারের বৃদ্ধি । এইসব মাদক দ্রব্য ব্যবহারে তথাকথিত সুফলের চেয়ে কুফলের গুরুত্ব অধিকতর । মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে বিচার শক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং মানসিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । মাদক দ্রব্য ব্যবহারকারীরা স্বীকার করে যে এটা দৈহিক, মানসিক এবং আত্মিকভাবে একটা মরণপথে যাত্রা । এই কুঅভ্যাসের দুঃখজনক পরিণতিতে প্রায়শই মস্তিষ্ক বিকৃতি, খুন এবং আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটে ।
লোকেরা তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপের ফলে, স্বাভাবিক প্রবণতায় এবং প্রবল উত্তেজনার অনুভূতিতে শয়তানের সাজানো পরিকল্পনা মতই অনায়াসে এদিকে ঝুঁকে পড়ে । এই অবস্থায় দেহ বাধাহীন ভাবেই পরিতৃপ্তি খোঁজে । যৌন অনৈতিকতা কখনও কামনার আগুন নেভাতে পারে না, বরং তা আরও উস্কে দেয়। অবৈধ যৌন সংসর্গে কামনার আগুন থেমে যায় না , ঠিক যেমন মদ পান করলেও মদের নেশা কমে যায় না । সত্যিকার বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের মধ্যে যে কাম- লালসা আছে, তা আমাদের দমন করা উচিত । প্রাণের যে অংশ - বিশেষ অনন্তকাল বেঁচে থাকে, আর ঈশ্বরের পরিত্রাণের জন্য যখন অগ্রসর হয়, তখন তা ঈশ্বরের আইন-কানুনের প্রতি সম্মান দেখাতে চায় ।
লাম্পট্য , ব্যভিচার, সমকামিতা এবং পশুদের সাথে যৌন মিলন ঈশ্বরের বাক্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ( লেবীয়পুস্তক ১৮ : ২৩; গালাতীয় ৫ : ১৯ - ২১ পদ ) । অনৈতিকতা বেদনা নিয়ে আসে , অনেক হৃদয় ভেঙে দেয় , ঘৃণ্য কাজ করায়, নিজেকে দোষী করে এবং নানা রকম যৌন ঘটিত রোগের বিস্তৃত ঘটায় । কিন্তু খাঁটি থাকাটা সম্মানজনক এবং তা নিজেকে চিনতে বোধ - বুদ্ধি এনে দেয় । একজন লোক অনৈতিক জীবন - যাপনের মাধ্যমে পরম সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করে, এটা চিন্তা করা যেমন ভুল ; একজন নীতিবান ও খাঁটি লোক বন্দীতে ও দুর্দশায় রয়েছে, এটা চিন্তা করাও ঠিক তেমনি ভুল ।
পাপ ও লজ্জাজনক মন্দতার মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অনৈতিকতা এবং আত্মিক অন্ধত্ব, কিন্তু বাইবেল আদর্শ আচার-আচরণের মাপকাঠি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে । এটা সুনিশ্চিতভাবে এবং অনন্তকালীন অধিকার নিয়ে কোনটা ভুল ও কোনটা নির্ভুল সে সম্বন্ধে বলেছে ।
ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন যৌন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে যেন মানবজাতি বংশ বিস্তার করতে পারে এবং স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে বিয়ের চুক্তির গুরুত্ব তারা উপলব্ধি করে । তিনি সঠিকভাবে বিয়ের মধ্য দিয়েই এই আকাঙ্ক্ষার পরিপূর্ণতা লাভ করতে অনুমতি দিয়েছেন । “প্রত্যেকে যেন বিয়ের ব্যাপারটাকে সম্মানের চোখে দেখে । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের সম্বন্ধ পবিত্র রাখা উচিত, কারণ যে কোন রকম ব্যভিচার হোক না কেন, যারা এই দোষে দোষী ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন “ ( ইব্রীয় ১৩ : ৪ পদ ) ।
রোমীয়দের কাছে লেখা বইটিতে প্রেরিত পৌল সমকামীদের উপরে ঈশ্বরের বিচার সম্বন্ধে লিখেছেন । “মানুষ এই সব করছে বলে ঈশ্বর লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন । স্ত্রীলোকেরা পর্যন্ত পুরুষদের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক ব্যবহারের বদলে অন্য স্ত্রীলোকদের সঙ্গে অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ কাজ করছে । পুরুষেরাও ঠিক তেমনি করে স্ত্রীলোকদের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে পুরুষদের সঙ্গে কামনায় জ্বলে উঠেছে ; পুরুষ পুরুষের সঙ্গে লজ্জাপূর্ণ কাজ করছে । ফলে তারা প্রত্যেকেই তার অন্যায় কাজের পাওনা শাস্তি নিজের মধ্যেই পেয়েছে । এইভাবে মানুষ ঈশ্বরকে মানতে চায়নি বলে ঈশ্বরও পাপপূর্ণ মানের হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন, আর সেইজন্যই মানুষ অনুচিত কাজ করতে থাকে । ঈশ্বরের এই বিচারের কথা তারা ভাল করেই জানে যে, এইরকম কাজ যারা করে তারা মৃত্যুর শাস্তির উপযুক্ত । এই কথা জেনেও তারা যে কেবল এইসব কাজ করতে থাকে তা নয় , কিন্তু অন্য যারা তা করে তাদের সায়ও দেয় “ ( রোমীয় ১ : ২৬ - ২৮ ও ৩২ পদ ) । এটা সাদোম এবং ঘমোরার একটা জঘন্যতম পাপ, যার ফলে ঈশ্বরের বিচার তাদের উপরে নেমে এসেছিল ( আদি পুস্তক ১৯ অধ্যায় ) । শাস্ত্র অনুসারে পবিত্র আত্মাকে আমাদের হৃদয়ে ধরে রাখা ও খ্রীষ্টিয় জীবন - যাপন করা অসম্ভব যদি এই ধরনের পাপে আমরা চলি এবং অভ্যাস রাখি ।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে থাকতে চান , তাহলে অবশ্যই তাঁর সহভাগিতায় আপনাকে আসতে হবে । আপনি যে একজন পাপী তা বুঝেই স্বীকার করুন এবং বিশ্বাস করুন যে যীশু আপনার সকল দোষ বহন করে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন । তাহলে বিজয় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ।
যেহেতু ঈশ্বরের কাছে আপনি আপনার হৃদয় খুলে দিয়েছেন এবং আপনার পাপও স্বীকার করেছেন ; সেহেতু তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন । “ যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না “ ( ১ যোহন ১ : ৯ পদ ) ।
স্বইচ্ছায় আপনার সম্পূর্ণ জীবন আপনার উদ্ধারকর্তা যীশুর কাছে সমর্পণ করুন এবং তাঁর বাক্য ও পবিত্র আত্মাকে সত্যিকার বাধ্যতায় অনুসরণ করুন । একটি পরিবর্তিত জীবনের আশীর্বাদ হচ্ছে খাঁটি চিন্তা - ভাবনা, যা আমাদের কাজে - কর্মে এক চমৎকার পরিবর্তন এনে দেয় । খ্রীষ্ট আপনার জীবনের সমস্যার মোকাবেলা করতে সাহস যোগাবেন এবং আক্রমণকারী প্রলোভনগুলি জয় করতে শক্তি যোগাবেন । এখুনি যীশুর কাছে আসুন, এখুনি তিনি ডাকছেন: “ সদাপ্রভু কাছে থাকতেই তাঁর দিকে ফেরো; তিনি কাছে থাকতে থাকতে তাঁকে ডাক” ( যিশাইয় ৫৫ : ৬ পদ ) ।