“ তোমরা একজন লোককে এসে দেখ । আমি জীবনে যা করেছি সবই তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন । তাহলে উনিই কি সেই মশীহ ?” ( যোহন ৪:২৯ পদ ) ।
যাকোবের কূয়ার কাছে যীশু যে শমরীয় স্ত্রীলোকটির সাথে কথা বলেছিলেন এই কথাটি তারই বলা। স্ত্রীলোকটি তার গ্রামে ফিরে গিয়ে তার লোকদের কাছে যীশুর সাথে তার যত কথা হয়েছিল তা সবই বলেছিল। সে বলেছিল কিভাবে যীশু তার জীবনের সব কিছু বলে দিয়েছেন । সে এ কথাটি বলেছিল, “ তোমরা এসে…. দেখ । তাহলে উনিই কি সেই মশীহ?” স্ত্রীলোকটি তার হৃদয়ের মধ্যে নিশ্চিত বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে যীশু একজন নবী বা ভাববাদী । তিনিই সেই একজন, যাঁর জন্য সকলেই, এমন কি এই স্ত্রী লোকটিও অপেক্ষা করছিল - “তিনি মশীহ, ঈশ্বরের অভিষিক্ত একজন”- যাঁকে উদ্ধারকর্তা ও মুক্তিদাতা হিসাবে পাঠানো হয়েছে । স্ত্রীলোকটি চেয়েছিল যেন তার লোকেরা তাদের নিজেদের ভালর জন্যই এসে যীশুকে দেখে । লোকেরা এসেছিল, দেখেছিল এবং যীশুকে বিশ্বাস করেছিল । সেই স্ত্রীলোকটিকে তারা বলল, “ এখন যে আমরা বিশ্বাস করছি তা তোমার কথাতে নয়, কিন্তু আমরা নিজেরাই তাঁর কথা শুনে বুঝতে পেরেছি যে, উনি সত্যিই মানুষের উদ্ধারকর্তা” ( যোহন ৪:৪২ পদ ) ।
এসো, দেখ - তিনি কিভাবে সব মানুষের পাপের জন্য, অর্থাৎ তোমার ও আমার পাপের জন্য দুঃখ - কষ্ট ভোগ করেছেন । তিনিই কি “ পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র” নন? তিনি “ দয়া ও সত্যে পূর্ণ” “ ঈশ্বরের মেষ - শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন” ( যোহন ১:১৪ ও ২৯ পদ ) । এই যীশু কি গলগথায় প্রেক দ্বারা বিদ্ধ হন নি এবং তাঁর দেহের পাঁচটি স্থান থেকে রক্ত ঝরেছিল যেন আমরা আমাদের পাপের ক্ষমা পেতে পারি ? ( যোহন ১৯ অধ্যায় ) । এই জন্যই নবী যিশাইয় ৭০০ বছর আগে তার লেখা ৫৩ অধ্যায়ে তাঁকে চিহ্নিত করেছিলেন এবং মানুষের পাপের জন্য তাঁর দুঃখ ভোগ করার প্রতিকৃতি তুলে ধরেছিলেন । “ সত্যি, তিনিই আমাদের সব রোগ তুলে নিয়েছেন আর আমাদের যন্ত্রণা বহন করেছেন; কিন্তু আমরা ভেবেছি ঈশ্বর তাঁকে আঘাত করেছেন, তাঁকে মেরেছেন ও কষ্ট দিয়েছেন । আমাদের পাপের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে: আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে । যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে; তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি । আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি । সদাপ্রভু আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন “ ( যিশাইয় ৫৩: ৪- ৬ পদ ) । এই ভালবাসার গভীরতা আমরা কি মাপতে পারি ? যীশু বলেন, “ ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায় “ ( যোহন ৩:১৬ ) । এর চেয়ে মহৎ মাপের ভালবাসার উদাহরণ আমরা কি আর কোথাও দেখতে পাই ?
এসো, দেখ - ক্রুশে মারা যাবার পর তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল ? যেখানে তিনি ক্রুশে মারা গিয়েছিলেন তার কাছাকাছি একটা বাগানে - একটা নতুন কবরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল । যদিও তা সিলমোহর করে সৈন্যদের দিয়ে কড়া পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছিল তবু কবর কি তাঁকে সেখানে ধরে রাখতে পেরেছিল ? না, তাঁকে সেখানে ধরে রাখা যায়নি । সব বাধা অতিক্রম করে পরাক্রান্ত খ্রীষ্ট, জীবন ও মৃত্যুর চাবি যাঁর কাছে, তিনি তৃতীয় দিনে জীবিত হয়ে উঠেন। “এস, তিনি যেখানে শুয়ে ছিলেন সেই জায়গাটা দেখ,” স্বর্গদূতেরা কবরের কাছে যাওয়া বিশ্বাসী স্ত্রীলোকদের বলেছিলেন । তাঁর শিষ্যরাও সাক্ষ দিয়ে বলেছেন, “ঈশ্বর সেই যীশুকেই জীবিত করে তুলেছেন, আর আমরা সবাই তার সাক্ষী “ ( প্রেরিত ২: ৩২ পদ ) । আচ্ছা, যীশু কবর থেকে ওঠার পর শিষ্যরা কি তাঁকে দেখেছিলেন এবং তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন ? “ তাঁর দুঃখভোগের পরে এই লোকদের কাছে তিনি দেখা দিয়েছিলেন এবং তিনি যে জীবিত আছেন তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়েছিলেন । চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি শিষ্যদের দেখা দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় বলেছিলেন “ ( প্রেরিত ১:৩পদ ) । “ এর পরে তিনি একই সময়ে পাঁচশোরও বেশি ভাইদের দেখা দিয়েছিলেন “ ( ১ করিন্থীয় ১৫:৬ পদ ) ।
যীশু কবর থেকে জীবিত হবার পরে স্বর্গে উঠে গেছেন, তার কোন প্রমাণ আছে কি ? হ্যাঁ, যীশু তো জীবিত হয়ে ওঠার পরে নিজেই বলেছিলেন: “ যিনি আমার ও তোমাদের পিতা, যিনি আমার ও তোমাদের ঈশ্বর, আমি উপরে তাঁর কাছে যাচ্ছি” ( যোহন ২০: ১৭ পদ ) । প্রভু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে “ বৈথনিয়া পর্যন্ত গেলেন । সেখানে তিনি হাত তুলে তাঁদের আশীর্বাদ করলেন । আশীর্বাদ করতে করতেই তিনি তাঁদের ছেড়ে গেলেন এবং তাঁকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল” ( লুক ২৪: ৫০- ৫১ পদ ); “ সেখানে তিনি ঈশ্বরের ডান দিকে বসলেন” ( মার্ক ১৬: ১৯ পদ ) ।
যেহেতু যীশু স্বর্গে উঠে গেছেন, সেহেতু আমরা কি আশা করতে পারি যে তিনি আবার ফিরে আসবেন ? আর তিনি যখন আসবেন তখন আমরা কি তাঁকে দেখতে পাব ? হ্যাঁ যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছেন, “ আমি গিয়ে তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করে আবার আসব আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব, যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার” ( যোহন ১৪:৩ পদ ) । তাঁর ফিরে আসার বিষয়ে পবিত্র বাইবেলে অনেক কথা লেখা হয়েছে । যারা জীবিত আছে, এমন কি যারা মারা গেছে, সকলেই তাঁকে দেখতে পাবে । “ দেখ, তিনি মেঘের সঙ্গে আসছেন । প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দেখবে” ( প্রকাশিত বাক্য ১:৭ পদ ) । আচ্ছা, তাঁর আবার ফিরে আসার কারণ কি ? কারণ, তখন তাঁর ডান পাশে থাকা এবং বাঁ পাশে থাকা প্রত্যেকেই তাদের পুরস্কার পাবে ।
রাজা যীশুর ডান পাশে যারা থাকবে, তিনি তাদের বলবেন , “ তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এস । জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও” ( মথি ২৫: ৩৪ পদ ) । কিন্তু যারা তাঁর বাঁ পাশে থাকবে, তিনি তাদের বলবেন, “ ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও । শয়তান এবং তাঁর দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও “ ( মথি ২৫:৪১ পদ ) ।
তিনি কখন আসবেন তা কি আমরা বলতে পারি ? না, কেউই জানে না তিনি কখন আসবেন ? যীশু বলেছেন, “ তাই বলি, তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোনদিন আসবেন তা তোমারা জান না “ ( মথি ২৪: ৪২ পদ ) আর, “ সেইজন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না সেই সময়েই মনুষ্য পুত্র আসবেন “ ( মথি ২৪: ৪৪ পদ ) । যারা উদ্ধার পেয়েছে তাদের জন্য এটি এক মহিমা উজ্জ্বল ঘটনা, কারণ তখন তারা স্বর্গের গৌরবে প্রবেশ করবে এবং অনন্ত অনন্তকাল ধরে প্রভুর সাথে থাকবে । কিন্তু অন্যদিকে, যারা যীশু খ্রীষ্টের দেওয়া বিনা পয়সার দান উদ্ধার বা পরিত্রাণ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য তা হবে সবচেয়ে দুঃখের দিন ।
“ এসে দেখ ।” ফিলিপ নথনেলকে যীশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে কথাটি বলেছিলেন । তিনি বলেছিলেন, “ মোশি যাঁর কথা আইন - কানুনে লিখে গেছেন এবং যাঁর বিষয়ে নবীরাও লিখেছেন আমরা তাঁর দেখা পেয়েছি । তিনি যোষেফের পুত্র যীশু, নাসরত গ্রামের লোক” ( যোহন ১: ৪৫, ৪৬ পদ ) । নথনেল যীশুকে দেখতে এসে তাঁকে বললেন, “ গুরু, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলীয়দের রাজা” ( যোহন ১: ৪৯ পদ ) । তিনি বিশ্বাস করে উদ্ধার পেয়েছিলেন ।
প্রিয় পাঠক - পাঠিকা বন্ধু, এই যীশুর সাথে কি আপনার পরিচয় হয়েছে ? যদি তাঁর সাথে পরিচয় হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তাঁকে প্রেমিক ও দয়ালু হিসাবে দেখতে পাবেন । আর যদি আপনার সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে তাঁকে মুক্তিদাতা ও উদ্ধারকর্তা হিসাবে গ্রহণ করেন তাহলে তিনি আপনার পাপের ক্ষমা দিতে প্রস্তুত আছেন । আপনি কি তাঁর কথা অন্যদের কাছে বলবেন যেন তারাও তাঁকে “ এসে দেখে” এবং তাঁকে বিশ্বাস করে ?