সকল প্রকার গল্প বা ঘটনার মধ্যে খ্রীষ্টের জন্মের ঘটনাটি খ্রীষ্টিয়ানদের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি রয়েছে । সকল যুগের সেরা সবচেয়ে মহৎ আশ্চর্য ঘটনা হচ্ছে এটা, যার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা ।
পাপ করে মানুষ ঈশ্বরের সহভাগিতা থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছে । আদম ও হবা এদোন বাগানে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়ে পাপ করার পর ঈশ্বর নিজেই একজন মুক্তিদাতা দেবার প্রতিজ্ঞা তাদের কাছে করেছিলেন ( আদি পুস্তক ৩ : ১৫ পদ ) । তারা যে সম্পর্ক হারিয়েছিল, তা আবার ফিরিয়ে আনতে এটাই ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা ।
ঈশ্বর তাঁর নবীদের অনুপ্রাণিত করেন যেন তারা তাদের এই মুক্তিদাতা আসার বিষয় ভবিষ্যৎবাণী করেন । আর লোকেরা যেন সেদিকে লক্ষ্য রাখে সেজন্য লোকদের মনকে প্রভাবিত করতেও তিনি চেষ্টা করেছেন । তিনি সেজন্য ধর্মীয় আচার - অনুষ্ঠান দিয়েছিলেন যেন লোকেরা খ্রীষ্টের দিকে দৃষ্টি রেখে উপাসনা করে । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অনেক নবী পবিত্র আত্মার পরিচালনায় খ্রীষ্টের বিষয় বলেছেন । পিতৃপুরুষ যাকোবও যিহুদাকে আশীর্বাদ করে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন : ‘ যতদিন না শীলো আসেন এবং সমস্ত জাতি তাঁর আদেশ মেনে চলে , ততদিন রাজদণ্ড যিহুদারই বংশে থাকবে , আর তাঁর দু ‘ হাঁটুর মাঝখানে থাকবে বিচারদণ্ড ‘ ( আদি পুস্তক ৪৯ : ১০ পদ ) । ঈশ্বরের মহান মানুষ মোশি বলেছেন : “ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন । তাঁর কথামত তোমাদের চলতে হবে ।” ( দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ : ১৫ পদ ) । নবী যিশাইয় যীশুর বিষয়ে যে কথা বলেছিলেন , পরবর্তীতে যীশু নিজেই তাঁর সম্পর্কে সেই কথাগুলো ব্যবহার করেছেন : “ প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমার উপর আছেন , কারণ তিনিই আমাকে নিযুক্ত করেছেন যেন আমি গরীবদের কাছে সু- খবর প্রচার করি । তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন যাতে আমি লোকদের ভাঙ্গা মন জোড়া দিতে পারি এবং বন্দিদের কাছে স্বাধীনতা আর কয়েদীদের কাছে মুক্তি ঘোষণা করতে পারি “ ( যিশাইয় ৬১ : ১ পদ ) । আমাদের উদ্ধার কর্তার জন্মের সাতশ বছরেরও আগে নবী মিখা তাঁর জন্মস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করে বলেছেন : “ কিন্তু , হে বৈথলেহেম - ইফ্রথা , যদিও তুমি যিহুদা হাজার হাজার গ্রাম গুলোর মধ্যে ছোট , তবুও তোমার মধ্য থেকে আমার পক্ষে এমন একজন আসবেন যিনি হবেন ইস্রায়েলের শাসনকর্তা , যার শুরু পুরানো দিন থেকে , অনন্তকাল থেকে , ( মীখা ৫ : ২ পদ ) । তাঁর আগমন এমন এক সময় হয়েছিল , যখন ঘন অন্ধকারে চারিদিক ছিল আচ্ছন্ন , “ দেখ , পৃথিবী আঁধারে ঢেকে গেছে আর জাতিদের উপরে এসেছে ঘন অন্ধকার , কিন্তু সদাপ্রভু তোমার উপরে আলো দেবেন আর তাঁর মহিমা তোমার উপরে প্রকাশিত হবে “ ( যিশাইয় ৬০ : ২ পদ ) ।
“ সময়ের পূর্ণতা যখন আসল “ তখন প্রভুর এক দুত সেই মহান ঘটনার ঘোষণা দিলেন । প্রথমে মরিয়মকে বলা হল , “ পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে । এই জন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে “ ( লূক ১ : ৩৫ পদ ) , এবং তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে , কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন “ ( মথি ১ : ২১ পদ ) । তারপর , রাতের বেলা ভেড়া চড়াচ্ছিল একদল রাখাল ; তাদের কাছেও এই ঘোষণা দেওয়া হল , “ আজ দায়ূদের গ্রামে তোমাদের উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন । তিনিই মশীহ , তিনিই প্রভু “ ( লুক ২ : ১১ পদ ) । তারপর , একদল স্বর্গীয় দূত একসাথে সে রাতে ঈশ্বরের প্রশংসা গান করতে লাগলেন , “ স্বর্গে ঈশ্বরের গৌরব হোক , পৃথিবীতে যাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট তাদের শান্তি হোক “ ( লূক ২ : ১৪ পদ ) । স্বর্গদূতেরা রাখালদের কাছ থেকে স্বর্গে চলে যাবার পর তারা সকলে সেই মহা আশ্চর্য ঘটনা দেখতে গেল এবং সেই স্বর্গদূতেরা যেমনটি বলেছিলেন , ঠিক তেমনি দেখতে পেল । পূব দেশের জ্ঞানী লোকেরা আকাশের একটি তারা অনুসরণ করে , ঠিক যেমন ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল , তেমনি খ্রীষ্টকে খুঁজে পেলেন ( মথি ২ : ১১ পদ ) । অনেক লোকই যীশুর আশ্চর্য জন্ম সংবাদ শুনে আরও বিস্তারিত জানবার জন্য শাস্ত্র অনুসন্ধান করেন এবং নিশ্চিত হন যে , “ সারা জগতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি “ ( প্রেরিত ৪ : ১২ পদ ) ।
যীশু নিজেও এই মহান দানের নিশ্চয়তা দিয়েছেন । যোহন ৩ : ১৬ পদে বলা হয়েছে : “ ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে , তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন , যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করতে দিলেন , যেন তাঁর এই প্রায়শ্চিত্ত ও তাঁর এই রক্ত সেচনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পাপের ক্ষমা পাই । যীশু যদি এই পৃথিবীতে না আসতেন , তাহলে তো পাপের জন্য কোন প্রায়শ্চিত্ত সাধন হতো না । তাই , আমাদের পরিত্রাণ বা উদ্ধার নির্ভর করছে খ্রীষ্টের জন্ম , খ্রীষ্টের মৃত্যু , খ্রীষ্টের পুনরুত্থান এবং খ্রীষ্টকে উদ্ধার কর্তা হিসাবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে । এটাও অবশ্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ , যেন যে কেউ “ পিতার একজাত পুত্রকে “ বিশ্বাস করে এবং তাঁকে ব্যক্তিগত উদ্ধার কর্তা হিসাবে গ্রহণও করে । কারণ তিনি এসেছেন যেন আমাদের আরও প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন দিতে পারেন ।
তাহলে , এখন সকল মানুষ তাঁকে খুঁজুক , তাঁকে কাছে পাক , তাঁর উপাসনা করুক , এবং তাঁর উপযুক্ত হয়ে জীবন - যাপন করুক । এটা কি করে সম্ভব যে খ্রীষ্টের জন্মতিথি বড়দিন উৎসব পালিত হবে , অথচ খ্রীষ্ট নিজেই বাদ পড়ে থাকবেন ? যখন এই বড়দিন উৎসব পালিত হয় , তখন অনেক লোকই তাদের বিভিন্ন কাজকর্মে এবং চকচকে সাজগোজের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের শূন্যতা পূরণ করতে চেষ্টা করে থাকে । একজন ভাল খ্রীষ্টিয়ান বড়দিন উৎসবকে জাগতিকভাবে পালন করতে দেখে অনুভব করে যে প্রকৃত বড়দিনের উদ্দেশ্য যেন হারিয়ে গেছে । বড়দিন উৎসব হওয়া উচিত এই পবিত্র ঘটনা বার বার পড়েও অন্তহীন এই পবিত্র গল্পের উৎসবে সময় কাটানো । খ্রীষ্টিয়ানদের উৎসব কোন উৎসব মুখর এবং স্বার্থ নিয়ে কিছু করার উদ্দেশ্য নয় । আসুন , আমরা আনন্দ ভরা মনে স্মরণ করি “ দেখ , পিতা ঈশ্বর আমাদের কত ভালবাসেন ! তিনি আমাদের তাঁর সন্তান বলে ডাকেন “ ( ১ যোহন ৩ : ১ পদ ) । “ যে দানের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ঈশ্বরের সেই দানের জন্য তাঁর ধন্যবাদ হোক “ ( ২ করিন্থীয় ৯ : ১৫ পদ ) । আসুন , আমরা বিশ্বাসের চোখ মেলে , আত্মায় ও সত্যে নত - নম্র উপাসনায় আমাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা তাঁকে দেই ; ঠিক যেমন করে সেই জ্ঞানী ব্যক্তিরা আকাশের তারা অনুসরণ করে গিয়ে শিশু খ্রীষ্টকে দেখে তাদের ভক্তি- শ্রদ্ধা জানিয়েছিল !