দি চার্চ অফ গড বা ঈশ্বরের মন্ডলী কোন মানুষের সৃষ্ট সংস্থা নয়, কিন্তু প্রভুরই সৃষ্ট । যীশু বলেছেন, “ আর এই পাথরের উপরেই আমি আমার মন্ডলী গড়ে তুলব” ( মথি ১৬ : ১৮ পদ ) । যীশু জানতেন যে ঈশ্বরের মহান পরিকল্পনায় মন্ডলী অতি আবশ্যকীয় এবং এই ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে মন্ডলী অনন্তকাল ধরে থাকবে । চার্চ বা মন্ডলী হচ্ছে, বিশ্বাসীদের জন্য আত্মিক বাসগৃহ , যখন তারা এই পৃথিবীতে থাকে; আর স্বর্গ হচ্ছে অনন্ত কালের জন্য উদ্ধার প্রাপ্তদের বাসগৃহ ।
চার্চ বা মন্ডলী কি ?
প্রেরিত ১৩ : ১ , রোমীয় ১৬ : ৫ এবং ইফিষীয় ১ : ১ অনুসারে “ চার্চ অফ গড” বা “ঈশ্বরের মন্ডলী” হচ্ছে দৃশ্যমান একদল লোক, যাদের অবস্থান লক্ষণীয় । “এই পরিবার হল জীবন্ত ঈশ্বরের মন্ডলী, যা ভিত্তি ও খুঁটির মত ঈশ্বরের সত্যকে ধরে রাখে “ ( ১ তীমথিয় ৩ : ১৫ পদ ) । চার্চ বা মন্ডলীতে ঈশ্বরের বাক্যের মতবাদ ও নিয়ম-নীতি শিক্ষা দেওয়া হয় এবং পালন করা হয় । ঈশ্বরের রাজ্য এবং স্বর্গ রাজ্য, খ্রীষ্টের রাজ্যের অনুরূপ এবং অভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে ( লূক ১৭ : ২০, ২১ পদ ) । সারা পৃথিবীর সকল আত্মা, যারা ঈশ্বরের সন্তান, যারা খ্রীষ্টকে সত্যিই রাজা হিসাবে গ্রহণ করেছে; আর যদিও অনেকে জগতের এই দৃশ্যমান চার্চ বা মন্ডলীর সদস্য নয় , তবুও তাদের সকলকে নিয়েই এই রাজ্য গঠিত । যোহন ১০ : ১৬ পদে যীশু এই ঈশ্বরের সন্তানদের কথা বলেছেন, “ আরও মেষ আমার কাছে আছে যেগুলো এই খোঁয়াড়ের নয়; তাদেরও আমাকে আনতে হবে । তারা আমার ডাক শুনবে , আর তাতে একটা মেষের পাল ও একজন পালক হবে ।”
কিভাবে আমি ঈশ্বরের মন্ডলী চিনতে পারি ?
ঈশ্বরের মন্ডলী চিনতে পারা যায় কারণ ঈশ্বরের মন্ডলী ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বাস করে, শিক্ষা দেয় এবং পালন করে । চার্চ বা মন্ডলী বাইবেলের শিক্ষার সাথে কোন কিছু যোগও করে না, বিয়োগ করে না, কিন্তু বিপক্ষতা, উপহাস, এমনকি মৃত্যুর সামনেও তা ধরে রাখে ( যোহন ১৪ : ১৫ পদ ) । যীশু খ্রীষ্ট হচ্ছেন চার্চ বা মন্ডলীর ভিত্তি । মন্ডলীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে উদ্ধারের সুখবর প্রচার । চার্চ বা মন্ডলীর সদস্য হতে হলে নতুন জন্মের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । জল দ্বারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ হচ্ছে চার্চ বা মন্ডলীতে প্রবেশের দরজা । এই বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের সাথে এবং মন্ডলীর সাথে করা সদস্যদের চুক্তির প্রতীক বা চিহ্ন ( মথি ১৬ : ১৬ - ১৯ পদ ) । চার্চ বা মন্ডলীর মধ্যে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি প্রকাশিত হয় । একই সদৃশ্য আত্মা ও একে অন্যের পারস্পরিক ভালবাসার সাথে পবিত্র আত্মার ঐক্য প্রমাণিত হয় । “যদি তোমরা একে অন্যকে ভালবাস তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার শিষ্য “ ( যোহন ১৩ : ৩৫ পদ ) । এই ভালবাসা এবং নম্রতা অল্প অল্প করে ঈশ্বরের সন্তানদের সাথে যুক্ত হতে একজন শ্রোতার মনে আকুল আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করে । চার্চ বা মন্ডলী জাগতিক অভিলাষসমূহ, ফ্যাশন, কাম-লালসা এবং ক্ষমতার চেষ্টা, সুনাম এবং ধন-সম্পদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয় । ঝগড়া - ঝাটি, জোর - জবরদস্তি এবং যুদ্ধ - বিগ্রহের কোন স্থান ঈশ্বরের মন্ডলীতে নাই । সদস্য ভাইদের মধ্য থেকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় পালক মনোনীত হন । এই পালকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা শিক্ষা দেন এবং ঘোষণা করেন । চার্চ অফ গড বা ঈশ্বরের মন্ডলী শিক্ষা দেয় যে, পুরুষ ও স্ত্রীলোকের বিয়ে সম্মানযোগ্য এবং অবশ্যই সারা জীবনের জন্য প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার । একজন বিশ্বাসী একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করা মানে ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলা । যারা বিয়ে করতে আকাঙ্ক্ষী, তাদের জীবনে ঈশ্বরের পরিচালনার গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং তাদের আচরণের শুদ্ধতার প্রয়োজনীয়তাও বুঝতে হবে । সেই খ্রীষ্টের সময়কাল থেকেই, সব সময় একদল জনগোষ্ঠী রয়ে গেছে যারা যীশুর শান্তি এবং শত্রুদের ভালবাসার মধ্য দিয়ে জীবন - যাপনের মতবাদ আগলে ধরে রেখেছে । এইসব লোকেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত এবং তারা বিশ্বাস করতেন এবং শিক্ষা দিতেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য এক শান্তির রাজ্য, যার প্রজাদের জন্য জোর - জবরদস্তি অথবা হিংস্রতার কোন অনুমোদন নাই ।
চার্চ বা মন্ডলী কেন প্রয়োজন ?
প্রত্যেক খ্রীষ্টিয়ানের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন রয়েছে আত্মিক খাবার এবং আত্মিক সহভাগিতা । অন্য পরিপক্ক বিশ্বাসীরা যদি উৎসাহ দেয়, সতর্ক করে দেয় ও মনে করিয়ে দেয়, তাহলে প্রত্যেক খ্রীষ্টিয়ান খুশি মনে তা গ্রহণ করে । যীশু ঈশ্বরের সন্তানদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা একে অন্যের দিকে লক্ষ্য রাখে , এক ভাই অন্য ভাইয়ের রক্ষক হয় । বিশ্বাসীদের সহভাগিতার দলে নিরাপত্তা পাওয়া যায় । একজন রাখাল যেমন তার ভেড়াদের একসাথে কাছাকাছি রাখতে চায়; একই রকম কারণে যীশু চান যেন তার সন্তানেরা একই ঐক্যে বসবাস করে । ইব্রীয় পুস্তকটির লেখক বিশ্বাসীদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা সভায় একসঙ্গে মিলিত হওয়া বাদ না দেয় ( ইব্রীয় ১০ : ২৫ পদ ) । শুধুমাত্র নতুন জন্মপ্রাপ্ত বিশ্বাসীরা মন্ডলীতে একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধে যত্নশীল হয়ে নতুন নিয়মে শেখানো শিক্ষা পালন করতে পারে। মতবাদসমূহ এবং বাপ্তিস্মের নিয়ম পালন করা, পবিত্র বিয়ে অনুষ্ঠান, পবিত্র প্রভুর ভোজ এবং মন্ডলীর শাসনের জন্য দৃশ্যমান ঐক্যবদ্ধ একটি দেহ প্রয়োজন । খ্রীষ্ট মন্ডলী গেঁথেছেন বিশ্বাসীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং হারিয়ে যাওয়া এই পৃথিবীর কাছে ঈশ্বরের পরিকল্পনা তুলে ধরতে । মন্ডলীকে আত্মিক দানে ভূষিত করা হয়েছে যেন বিশ্বাসীরা পরিপক্ক হয় এবং পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করে । বিপদের সময় মন্ডলী বন্ধুর কাজ করে, যা পিতর বুঝতে পেরেছিলেন । পিতর যখন জেলখানায় বন্দি ছিলেন, মন্ডলী তখন তার জন্য অবিরত প্রার্থনা করেছিলেন, আর প্রভু পিতরকে জেল থেকে মুক্ত করেছিলেন ( প্রেরিত ১২ : ৪ - ১৪ পদ ) । ঘন অন্ধকারে ঢাকা মৃত্যু উপত্যকা পার হতে হলে, অথবা দুঃখ - কষ্টের সময়, সান্তনার কথা হচ্ছে এটাই যে , ঈশ্বরের লোকেরা দেখাশোনা করে ও প্রার্থনা করে ।
আমি কিভাবে ঈশ্বরের মন্ডলীর একজন সদস্য হতে পারি ?
যারা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়েছে এবং নতুন জন্ম পেয়েছে, তারা বাপ্তিস্ম নেবে ( প্রেরিত ২ : ৩৮ পদ ) । অনুতাপ করা মানে একজন তার পাপের জন্য বিবেকের দংশন অনুভব করবে এবং সব পাপ ছেড়ে দেবে । এই শর্ত অনুসারেই ঈশ্বর পাপের ক্ষমা দেন এবং পবিত্র আত্মা পাওয়া যায় । এভাবেই একজন তার জীবনে যিশু খ্রীষ্টে নতুন জীবন লাভ করে । বিশ্বাসে যদি আপনি প্রভুর সেবা করেন এবং তাঁর চার্চ বা মন্ডলীর মতবাদ ও শিক্ষাগুলিকে বিশ্বাস করতে ও সেই মত চলতে ইচ্ছুক হন, তাহলেই মন্ডলীর সদস্য হবার শর্তগুলি পূরণ হয় ।
মন্ডলীর আশীর্বাদ
বিশ্বাসীগণ মন্ডলীর মধ্যে একতা, সহৃদয়তা এবং সহভাগিতা পেয়ে থাকেন । মন্ডলীতে একজন অন্যজনের জন্য ভালবাসা দেখায় ও মাথা ঘামায়, এবং যারা উদ্ধার পায় নাই তাদের জন্য চিন্তা করে । পালক এবং সদস্যগণ সকলে মিলে একত্রে তাদের হৃদয় থেকে, পরিবার থেকে এবং তাদের মন্ডলীর মধ্য থেকে পাপ দূরে সরিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকে । পিতা - মাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের ভালবাসেন এবং সম্মান করতে ও বাধ্য হতে শিক্ষা দেন । যুবক এবং বুড়ো সকলেই একে অপরকে প্রতিদিন খ্রীষ্টিয়ান জীবন - যাপনের জন্য সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে । বাইবেলের নীতিমালা শিক্ষা দেওয় হয় যেন বিয়ে ভালভাবে টিকে থাকে এবং খাঁটি পরিবার গঠিত হয় । সদস্য - সদস্যাদের মধ্যে নৈতিক শুদ্ধতা এবং শান্তিপূর্ণ বিবেক বুদ্ধি এবং এমন এক পারিপার্শ্বিক অবস্থা সৃষ্টি করে , যেখানে নির্ভরতা ও নিশ্চয়তা রয়েছে । সত্যিকার তৃপ্তিই স্বার্থ - সুখ, সুনাম , সম্পদ, অথবা ক্ষমতার প্রলোভনকে জয় করতে সক্ষম হয় ।
খ্রীষ্টের মন্ডলী কোথায় রয়েছে ?
নম্র ও বাধ্য বিশ্বাসীদের হৃদয় যীশু বাস করবেন ( যোহন ১৪ : ২৩ পদ ) । খ্রীষ্টিয়ানদের এইরকম একটি দলকে তাদের বাইবেলের সকল মতবাদ অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে এবং পবিত্র আত্মার সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে চিনতে পারা যায় । একজন অনুসন্ধানকারীকে সতর্কতার সাথে এবং প্রার্থনা করে নতুন নিয়মে বলা সারকথা পড়া উচিত এবং সেই চার্চে বা মন্ডলীতে যুক্ত হওয়া উচিত যেখানে শাস্ত্রীয় শিক্ষা মেনে চলার কথা বলে এবং পবিত্র আত্মার শক্তির অধীনে চলে । “ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন বলে তোমাদের মধ্যে কেবল একটাই আশা আছে, মাত্র একটিই দেহ আছে , একজনই পবিত্র আত্মা আছেন, একজনই প্রভু আছেন , একই বিশ্বাস আছে, একই বাপ্তিস্ম আছে, আর সকলেরই ঈশ্বর ও পিতা মাত্র একজনই আছেন । তিনি সকলের উপরে; তিনিই সকলের মধ্যে ও সকলের অন্তরে আছেন” ( ইফিষীয় ৪ : ৪ - ৬ পদ ) ।