প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আকাংখা থাকে সে যেন নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে পারে । ছোট বাচ্চা শিশুদের একলা ফেলে রাখলে তারা ভয় পায় । তারা অন্ধকার বা অজানা কোন কিছুকে ভয় পেয়ে যায় । ছেলে - মেয়েরা অবশ্যই পিতা - মাতার ভালবাসার বাহুডোরে থাকতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে করে । এখানেই তারা সুরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা লাভ করে । বয়সে পরিপক্ক হতে হতে আমাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষিত থাকার আকাংখা কিন্তু আমাদের ছেড়ে যায় না । এটা আমাদের জন্মগত আকাংখা, যা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়েছেন । পক্ষান্তরে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের নির্ভিক দেখায়; কিন্তু তাদের হৃদয়ে তারা অজানা কোন কিছুকে ভয় পায়, কষ্টকে , দুর্ঘটনাকে, অথবা অসুস্থতাকে ভয় পায় । তাদের মনের মধ্যে এক রকম অস্বস্থি অনুভব করে, যখন ভাবে মৃত্যুর পরে আমার কি হতে পারে ।
ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা । মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে তাঁর সবচেয়ে সেরা সৃষ্টি । তিনি আদম ও তার স্ত্রী হবাকে এদন বাগান নামে একটি স্বর্গতুল্য স্থানে রাখলেন। তারা সেখানে নিরাপদ, সুখী ও মুক্ত ছিল । অতঃপর শয়তান সাপের আকার ধারণ করে তাদের কাছে হাজির হল, তাদের ঠকাল এবং তারা পাপে পতিত হলে । ঈশ্বরের অবাধ্য হবার কারণে, তারা ঈশ্বরের সহভাগিতার বাইরে চলে আসল এবং এদন বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হল । ( আদিপুস্তক ৩ অধ্যায় )
কি কঠোর পরিবর্তন! এর আগে তারা ছিল নিরাপদ এবং ভয়শূন্য । তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে শান্তির সাথে তাঁর উপস্থিতি উপভোগ করতে পারছিল । এখন, মনের এই শান্তির বদলে তাদের মধ্যে অস্থিরতা, দোষী মনোভাব এবং ভয় বাসা বাঁধল । ঈশ্বরকে দেখেও তাদের ভয় হয়েছিল এবং তারা তো নিজেদের লুকিয়েছিল! তারা আত্মিক মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, যার মানে হল ঈশ্বরের কাছ থেকে আলাদা থাকা । অবাধ্যতার ফলে যখন ঈশ্বরের সাথে তাদের সহভাগিতার সম্পর্ক ভেংগে গেল, তখন আদম ও হবার হৃদয়ে গভীর যন্ত্রণা হয়েছিল । শুধুমাত্র জীবন্ত ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা প্রাণের সন্তোষ জন্মাতে পারে ।
মানুষের মনের গভীরে থাকা দ্বন্দের কারণে তা এখন বাইরে প্রকাশ পেতে শুরু করল, ফলে যুদ্ধ অথবা খুন হতে থাকল । পৃথিবীতে যথেষ্ট বিবাদ ও অশান্তি হতে থাকল; এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর সাথে ঝগড়া, এক দেশ অন্য দেশের সাথে বিবাদ , যেন তাকে দখলে আনা যায়। এই যুদ্ধ ও বিবাদের মধ্যে একটি দেশ সব সময় জয়ী হয়ে উঠতে লাগল, পরবর্তীতে দুর্বলতার কারণে আবার অন্য দেশের অধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হল । দানিয়েল ভাববাদী বলেছেন, “ যাতে জীবিত লোকেরা জানতে পারে যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে মহান ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন এবং তিনি যাকে খুশি তাকে রাজ্য দান করেন ও মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যে নীচু তাকেই তার উপরে বসান” ( দানিয়েল ৪:১৭ পদ ), এবং “ তিনি রাজাদের সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন” ( দানিয়েল ২:২১ পদ ) ।
সারা পৃথিবীতে আজ অসংখ্য নির্লজ্জ সন্ত্রাস ঘটে চলেছে, যা অনেক মানুষের নিরাপত্তা কাঁপিয়ে তুলছে । এই সব ঘটনাবলী অনেক হৃদয়ে ভয়- ভীতি নিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনিশ্চয়তারও সৃষ্টি করেছে ।
আমরা সকলেই আশা করে থাকি যেন আমরা নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন কাটাতে পারি । একটি দেশের স্বার্থকতা ঈশ্বরের আশীর্বাদের উপরে নির্ভর করে । যদি মানুষ তাদের পাপে পূর্ণ জীবনে অনুশোচনা করে এবং ঈশ্বরকে ভয় করে, তাহলে তিনি সেই দেশের দিনগুলো বাড়িয়ে সুস্থিরতা দিতে পারেন ( দানিয়েল ৪:২৭ পদ ) । উইলিয়াম উইলবারফোর্স ( ১৭৫৯ - ১৮৩৩ ), একজন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য বলেছিলেন যে তার আশা হচ্ছে ব্রিটেন ‘ তাদের নৌবাহিনী বা সেনাবাহিনীর উপরে অথবা দেশের শাসকবর্গের প্রজ্ঞার উপরে নির্ভর করবে না, বরং বিশ্বাসের সাথে তার দেশের অনেকেই এখনও যে খ্রীষ্টের সুসমাচার ভালবেসে ধরে রেখেছে ও মেনে চলেছে; তাদের প্রার্থনাই বিজয়ী হতে পারে’ । একটা দেশের নিরাপত্তা সেই দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতার উপরে কম নির্ভরশীল হয়ে যদি সেই দেশের জনগণের মধ্যে ধার্মিকতা এবং ঈশ্বর ভীতি বেশি করে প্রাধান্য পায় ।
আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় । আমরা আমাদের অন্তরের গভীর থেকে এমন এক ধরণের নিরাপত্তা বোধ করতে পারি যা পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র বা দেশ দিতে পারে না । যীশু বলেছেন, “ আমার রাজ্য এই জগতের নয় । যদি আমার রাজ্য এই জগতের হত তবে আমি যাতে যিহুদী নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয় “ ( যোহন ১৮:৩৬ পদ ) । এই পৃথিবীর রাজ্যগুলো ঈশ্বরের হাতে এবং তা চিরকাল টিকে থাকবে না । ঈশ্বরের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক একবারে ভিন্নতর মাত্রায় অবস্থিত । আমরা যখন ঈশ্বরের রাজ্যে , তখন আমরা এমন একটি রাজ্যে যার সাথে জগতের কোন রাজ্যের উত্থান পতন জড়িত নয় । ঈশ্বরের রাজ্যের নিরাপত্তা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী রাজ্যের নিরাপত্তার চেয়ে বেশি । পৃথিবীর রাজ্যগুলোতে যা-ই ঘটুক না কেন সেখানে আমরা নিরাপদ । পৃথিবীর রাজ্যগুলোর উত্থান ঘটবে আবার পতনও ঘটবে, কিন্তু যীশুর প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, তাঁর পিতার হাত থেকে তাঁর সন্তানদের কেউই কেড়ে নিতে পারবে না । ( যোহন ১০:২৯ পদ ) ।
বাইবেলের ভবিষ্যতবাণী হিসাবে, “ কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ও ভন্ডেরা দিন দিন আরও খারাপ হবে” ( ২ তীমথিয় ৩:১৩ পদ ) । ভবিষ্যত আমাদের কোন নিরাপত্তা দেয় না । শেষকাল যতই কাছে এগিয়ে আসছে, ততই পৃথিবীর চারিদিকে বিবাদ ও গোলোযোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে । একটা দিন আসছে, ঈশ্বর যা ঠিক করে রেখেছেন, তার “আর দেরি হবে না” ( প্রকাশিত বাক্য ১০:৬ পদ ) । ২ পিতর ৩:১০ পদে আমরা পড়ি, “ কিন্তু প্রভুর দিন চোরের মত আসবে । সেই দিন মহাকাশ হু হু শব্দ করে শেষ হয়ে যাবে এবং চাঁদ - সূর্য - তারা সবই পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে । পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সবই পুড়ে যাবে ।” পবিত্র শাস্ত্র বলেছে যে এই সময় সকলে হাঁটু পাতবে এবং সকল মানুষ সর্বশক্তিমান বিচারকের সিংহাসনের সামনে জড়ো করা হবে । সেই মহা বিচার দিনে , যখন “ আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে “ ( মথি ২৪:৩৫ পদ), তখন পৃথিবীর কোন শক্তি আমাদের রক্ষা করতে পারবে না । সব লোকদেরই মহান রাজার কাছে হাঁটু পাততে হবে এবং বিচারিত হতে হবে । কোন গুহা বা দুর্গ তাদের কাউকেই রক্ষা করতে পারবে না, যদিও অনেকেই সেখানে আশ্রয় নেবে । সকল রকম যানবাহন থমকে যাবে । মানুষের তৈরি অস্ত্র - শস্ত্র কোন কাজে আসবে না । সতর্ক করে দেওয়ার জন্য কোন পাগলা ঘন্টি বাজাবে না । কোন জরুরী বিভাগ বা আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি আমাদের বাঁচাতে বা উদ্ধার করতে আসবে না । আপনি ও আমি একা একা মহান বিচারকের সামনে দাঁড়াব । সেই সময় আমাদের একমাত্র সুরক্ষা হবে যদি আমাদের নাম স্বর্গের জীবন বইতে লেখা থাকে ( লুক ১০:২০ পদ ) । যখন আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি এবং যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করি, তখন আমাদের নাম জীবন বইতে লেখা হয় । তখন তিনি আমাদের ক্ষমা করেন এবং তাঁর মহামূল্য রক্তে আমাদের ধৌত করেন । সারা পৃথিবীকে রক্ষা করতেই তিনি এই রক্ত ক্রুশে ঝরিয়েছিলেন । এভাবেই আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলে গৃহিত হই ।
ঈশ্বরের সন্তানরা কেউই অসুস্থতা বা দুঃখ - কষ্টের থেকে অব্যহতি পাবে না । হতে পারে তারা তাদের জীবন হারাবে, কিন্তু তাদের ভয় পাবার দরকার নেই কারণ তারা যীশুর বাহুডোরে সুরক্ষিত । তাদের জীবনে যাই ঘটুক না কেন, তারা আস্থা রাখতে পারে যে দুঃখ - কষ্ট আসলেও তা তাদের মঙ্গলের জন্যই আসবে । ( রোমীয় ৮:২৮ পদ ) ।
আপনি কি নিরাপত্তার জন্য আকাংখিত? আপনার মনের গভীরে এমন আকুল আকাংখা আছে, যাকে আপনি সন্তুষ্ট করতে পারছেন না ? যদিও প্রাণ ঈশ্বরের জন্য আকাংখিত, তবুও পাপ স্বভাবের কারণে মানুষ মাংসিক ভোগ বিলাসে আকাংখিত হয় । ঈশ্বরের শান্তি ছাড়া, একজন পাপী হচ্ছে “ দুলতে থাকা সমুদ্রের মত যার ঢেউ পাঁক ও কাদা উপরে উঠায়” ( যিশাইয় ৫৭:২০ পদ ) । এইরকম দ্বন্দ ও বিবাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই সবচেয়ে কম সহ্যশক্তি সম্পন্ন হয় এবং সিদ্ধান্তহীনতায় সিদ্ধান্ত নেয় । সব শেষে, তারা জীবন থেকে মৃত্যুর পথে পিছলে পড়ে এবং এক অনন্তকালের সামনে এসে দাঁড়ায় ।
বাস্তব ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি শুধুমাত্র তখনই পাওয়া যায়, যখন আমরা আমাদের দেহ , মন ও আত্মা তাঁর কাছে সমর্পণ করি যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং ভালবেসেছেন । তিনি শুধুমাত্র পৃথিবীর প্রভু নন, কিন্তু তিনি আমাদের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই জানেন । তিনি এই পৃথিবীতে আসলেন যেন, “ যাতে অন্ধকারে ও মৃত্যুর ছায়ায় যারা বসে আছে তাদের আলো দিতে পারেন, আর শান্তির পথে আমাদের চালাতে পারেন “ ( লূক ১:৭৯ পদ ) । তিনি দুঃখ - কষ্ট ভোগ করলেন এবং তাঁর মহামূল্য রক্ত ধরালেন যেন আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা পাই ।
আপনি কি আপনার হৃদয়ে পাপের বোঝা ভার অনুভব করেন ? আপনি কি ভবিষ্যত সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন, অথবা আপনি কি তা ভুলে যেতে চান ? আপনার বহনযোগ্য বোঝার চেয়ে আপনি কি বেশি বহন করছেন ? আপনি কি নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে আকাংখী ? যীশু বলেছেন, “ চাও তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ কর, পাবে; দরজায় ঘা দাও, তোমাদের জন্য খোলা হবে” ( মথি ৭:৭ পদ ) । আপনার পাপের জন্য প্রভুর কাছে একটি প্রতিকার আছে । তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় বোঝা বহনকারী, এবং তাঁর জন্য কোন কিছুই কষ্টকর নয় । প্রেরিত ৩:১৯ পদে অনুরোধ করা হয়েছে “ এই জন্য আপনারা পাপ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের দিকে ফিরুন যেন আপনাদের পাপ মুছে ফেলা হয় ।” ঈশ্বর যিরমিয় ভাববাদীর মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন, “ তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি; তা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, ক্ষতির জন্য নয় । সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে … যখন তোমরা আমাকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হবে তখন আমাকে জানতে পারবে ( যিরমিয় ২৯:১১ ও ১৩ পদ ) ।