একজন ব্যক্তি কি উদ্ধার পেয়েছে, এই প্রশ্নটির উত্তর বার বার জিজ্ঞাসা করা হয় । বাইবেলে এই প্রশ্নের উত্তর আছে কি না ? একজন ব্যক্তি কি জানে, তার পাপ ক্ষমা হয়েছে, কি হয় নাই ? অথবা, পাপ ক্ষমা পাবার জন্য কি তাকে বিচার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ? সেই পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান ফেলে রাখা খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ।
হ্যাঁ, আমাদের জানতে হবে এবং প্রভুও চান আমরা যে উদ্ধার পেয়েছি তা নিশ্চিতভাবে জানি । তাঁর আমন্ত্রণ, “ তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস ; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব” ( মথি ১১ : ২৮ পদ ) । আবার যোহন ৩ : ১৬ পদে তিনি বলেছেন, “ ঈশ্বর মানুষকে ( পাপীরা সকলেই ) এত ভালবাসলেন যে , তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” এটা তো সত্যি যে স্বভাবত আমরা সবাই পাপ করেছি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের যোগ্যতা হারিয়েছি ।
নতুন করে জন্ম নেবার আগে মানুষের একজন উদ্ধার কর্তার প্রয়োজন । যেহেতু সে - তো পাপ ও অপরাধে মৃত এবং হারিয়ে গেছে, সেহেতু তার তো প্রয়োজন একজন উদ্ধার কর্তার, যে তাকে উদ্ধার করতে পারে । আমাদের দয়ালু এবং ক্ষমাশীল স্বর্গীয় পিতা ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য উদ্ধার কাজ করেছেন, সকলের জন্য - যারা তাঁর মহৎ অনুগ্রহের সুযোগ গ্রহণ করতে চায় । তিনি ( যীশু ) ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন, রক্ত ঝরালেন, “ আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন” ( ১ যোহন ২ : ২ পদ ) । এজন্য একজন পাপী পাপ ক্ষমা পেয়ে ও পরিষ্কৃত হওয়ার ইচ্ছা অনুভব করেই আকুল ভাবে মিনতি করবে , “ হে ঈশ্বর ! আমি পাপী ; আমার প্রতি করুণা কর” ( লূক ১৮ : ১৩ পদ ) । পাপের জন্য হতাশা পীড়িত হয়ে ও তার দোষ বুঝতে পেরে সে প্রথমে ঈশ্বরের কাছে তার পাপ স্বীকার করবে এবং তারপর মানুষের সাথে তার সম্পর্ক যথাযথভাবে স্থাপন করবে । বিশ্বাসে সে তাকাবে তাঁর দিকে, যিনি “ ঈশ্বরের মেষ - শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন” ( যোহন ১ : ২৯ পদ ) । তখন যীশু তার সকল পাপ ক্ষমা করেন ।
অনেক ভাবে ঈশ্বর আমাদের পাপ ক্ষমা করার প্রমাণ দিয়েছেন । কোন কোন সময় খুব সহজভাবে বলেছেন, “ তোমার পাপ ক্ষমা করা হল” ( লূক ৫ : ২০ পদ ) । যদি আমাদের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যায়, তাহলে আমরা ঈশ্বরের সাথে শান্তিতে আছি । “ বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে আর তার ফলেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে শান্তি হয়েছে “ ( রোমীয় ৫ : ১ পদ ) । (খ্রীষ্টিয়ান বলে স্বীকৃতি পাওয়া, বাপ্তিস্ম নেওয়া বা মন্ডলীর সদস্য পদ পাওয়া আর নতুন জন্ম পাওয়া কিন্তু এক কথা নয় ) । “যদি কেউ খ্রীষ্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল । তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে” ( ২ করিন্থীয় ৫ : ১৭ পদ ) । সে - ই একজন নতুন জন্ম প্রাপ্ত ( নতুন সৃষ্টি ) , যেমন যোহন ৩ অধ্যায়ে যীশু নীকদীমকে বলেছিলেন, “ আমি আপনাকে সত্যিই বলছি জল এবং পবিত্র আত্মা থেকে জন্ম না হলে কেউই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারে না ।” এটাই হচ্ছে আত্মিক জন্ম । স্বাভাবিক উপায়ে জন্ম স্বাভাবিক জীবন উৎপন্ন করে, কিন্তু আত্মায় জন্ম হলে আত্মিক জীবন উৎপন্ন করে । আত্মিক জীবনের ফল হচ্ছে “ জলে জন্ম নেওয়া” ( ঈশ্বরের বাক্য ) এবং “পবিত্র আত্মায় জন্ম নেওয়া “ ( যোহন ৩ : ৫ পদ ) ।
একজন ব্যক্তি পবিত্র আত্মায় জন্ম নিয়েছে মানে সে মৃত্যু ( আত্মিক মৃত্যু ) থেকে জীবিত হয়েছে এবং “উপরের অর্থাৎ স্বর্গীয় বিষয়ে আগ্রহী হয়েছে” ( কলসীয় ৩ : ১ পদ ) “ আমি আপনাদের সত্যি বলছি, আমার কথা যে শোনে এবং আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে বিশ্বাস করে তার অনন্ত জীবন আছে । তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না ; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে” ( যোহন ৫ : ২৪ পদ ) ।
“যারা খ্রীষ্ট যীশুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না” ( রোমীয় ৮ : ১ পদ ) । তাদের মনোযোগ সবই স্বর্গীয় বিষয়ের উপরে, জাগতিক বিষয়ের উপরে নয় । তাদের সকল জাগতিক বিষয়গুলি তারা অনুতাপের মাধ্যমে দমন করবে অর্থাৎ মেরে ফেলবে : মাংসের অভিলাষী হবে না বা প্রাকৃতিক কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্খার পথও অনুসরণ করবে না । “তোমরা জগৎ এবং জগতের কোন কিছু ভালোবেসো না, যদি কেউ জগতকে ভালবাসে তবে সে পিতাকে ভালবাসে না, কারণ জগতের মধ্যে যা কিছু আছে - দেহের কামনা, চোখের লোভ এবং সাংসারিক বিষয়ে অহংকার - এর কোনটাই পিতার কাছ থেকে আসে না, জগৎ থেকেই আসে “ ( ১ যোহন ২ : ১৫ - ১৬ পদ ) । ঈশ্বরের আত্মা এই নিশ্চয়তা দেয় : “ পবিত্র আত্মাও নিজে আমাদের অন্তরে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান । আমরা যদি সন্তানই হয়ে থাকি তবে ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের যা দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন আমরা তা পাব । খ্রীষ্টই ঈশ্বরের কাছ থেকে তা পাবেন আর আমরাও তাঁর সঙ্গে তা পাব, কারণ আমরা যদি খ্রীষ্টের সঙ্গে কষ্ট ভোগ করি তবে তাঁর সঙ্গে মহিমারও ভাগী হব” ( রোমীয় ৮ : ১৬ , ১৭ পদ ) ।
“কারণ ঈশ্বর তাঁর দেওয়া পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাদের অন্তর তাঁরই ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করেছেন ” ( রোমীয় ৫ : ৫ পদ ) । এতে আমরা স্বর্গীয় বিষয়ের দিকে এগিয়ে আসতে থাকি : পবিত্র শাস্ত্র ভালবাসি , পড়ি এবং আমাদের প্রভুর পক্ষে সাক্ষ্য দেই ।
ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই ভালবাসা সাধারণ ভালবাসার ও পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে অনেক অনেক উপরে । এই ভালবাসা তার শত্রুকেও ভালবাসতে এমন কি যারা তাকে ঘৃণা করে তাদের ও ভালবাসতে শেখায় ( মথি ৫ : ৪৪ পদ ) ।
প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিতে গিয়ে একথাই শিখিয়েছেন ,” এই জন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার শিষ্য কর । পিতা , পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিস্ম দাও । আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিয়েছি তা পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও ” ( মথি ২৮ : ১৯, ২০ পদ ) ।
মন পরিবর্তনকারী , নতুন জন্ম প্রাপ্ত ক্রিস্টিয়ানেরা , জল দ্বারা বাপ্তিস্ম পেয়ে আত্মিকভাবে জীবন পায় এবং ঈশ্বরের মন্ডলীতে গৃহীত হয় । তাদের বলা হয় ঈশ্বরের পরিচর্যাকারী । খ্রীস্টিয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রার্থনাশিল জীবন গড়ে ওঠে । আর প্রার্থনা হচ্ছে খ্রীষ্টিয়ানদের জীবন - বায়ু । প্রার্থনার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি ও সবলতার পূর্ণতা প্রকাশিত হয় । “প্রভুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁরই দেওয়া মহা শক্তিতে শক্তিমান হও “ ( ইফিষীয় ৬ : ১০ পদ ) , আর সক্রিয়ভাবে ধরে রাখতে হবে, “ তোমার যা আছে তা শক্ত করে ধরে রাখ, যেন কেউ তোমার জয়ের পুরস্কার কেড়ে না নেয় “ ( প্রকাশিত বাক্য ৩ : ১১ পদ ) ।