“তোমরা জগৎ এবং জগতের কোন কিছু ভালোবেসো না “ ( ১ যোহন ২ : ১৫ পদ ) ।
পৃথিবীর সকল প্রকার আনন্দ - স্ফূর্তির মধ্যে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর বিপক্ষ শক্তি হচ্ছে টেলিভিশন । মানুষের আত্মিক এবং নৈতিক জীবনকে দোল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে এটা বেশ সাহায্য করে । এর অনেক ক্ষতিকর মন্দ প্রভাব অজস্র পরিবারের থাকবার ঘরে চুপিসারে ঢুকছে । এর মধ্য দিয়েই যৌন তাড়নার প্রভাব এবং অপরাধ প্রবণতার দৃশ্যগুলি পবিত্র পরিবারের আঙিনায় প্রবেশ করে । এই বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে মন্দতা ও বিপদের গুরুত্ব ডিঙিয়ে পরিবারেও দেখা সম্ভব হয় , কারণ পিতা - মাতার অনুমোদন নিয়েই তো টিভি চালানো হয় ।
অধিকাংশ পিতা - মাতা কোন সময় চিন্তাও করে না যে তারা তাদের ছেলে - মেয়েদের খারাপ কোন জায়গায় বা সিনেমা হলে , নাইট ক্লাবে বা অন্য কোন আপত্তিকর আনন্দ - স্ফূর্তীর জায়গায় নিয়ে যাবে । অথচ একই ধরনের আনন্দ - ফুর্তি কিন্তু তরুণ - তরুণীরা বড়দের সামনে বসে একই সাথে দেখতে সুযোগ পাচ্ছে । শয়তান এখানে এক চরম বিজয় অর্জন করতে পেরেছে ! অনেক দেশের তরুণ সমাজকে এমন ব্যাপকভাবে ধ্বংস করতে এর সাথে তুলনীয় আর কিছু কি আছে ? এটা একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে চোখ দিয়ে যা দেখা যায় তা হৃদয়ে সুস্পষ্ট ছাপ ফেলে । প্রতিদিন টিভি চালালে দেখা যায় অশ্লীল নাচ - গান , মারামারি , খুন , রক্তারক্তি দৃশ্য , মদ খাওয়া , সিগারেট খাওয়া , স্বল্প বসন নারী - পুরুষের আবেগঘন জড়াজড়ি দৃশ্য । নিঃসন্দেহে অনেকের নৈতিক ও আত্মিক জীবন এতে থমকে যায় । নিষ্ঠুর , হিংস্র অপরাধগুলো অধার্মিক লোকদের দ্বারা সমর্থন পায় এবং যা লক্ষ লক্ষ লোক দেখে , কিন্তু তাদের আদর্শ দিয়ে তা প্রতিরোধ করার ইচ্ছা তারা হারিয়ে ফেলে । অনেক টিভি দর্শক স্বীকার করে যে টেলিভিশনে অনেক কিছু রয়েছে যা অন্যায় , কিন্তু ধর্মীয় বিষয় , শিক্ষামূলক উপস্থাপনা , সংবাদ পাঠ , আবহাওয়ার খবর বা বাজার সংবাদ ইত্যাদি ভালো বলে বিচার করা যায় । যখন একটা বাজে বিষয় টেলিভিশনে দেখানো হয় , তখন তাদের ইচ্ছা হয় যেন তা বন্ধ করে রাখে , কিন্তু বাস্তবে সবসময় তা সম্ভব হয় না । তাছাড়া টিভি দেখতে দেখতে অনেক মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয় । পবিত্র বাইবেল এই ধরনের সময় নষ্ট করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে , “ তোমরা কিভাবে চলছ সে বিষয়ে ভালো করে ভেবে দেখো । বুদ্ধিহীন লোকদের মত না চলে জ্ঞানীদের মতো চলো । তোমাদের হাতে সৎ কাজ করবার যে সুযোগ আছে তা পুরোপুরি ভাবে কাজে লাগাও , কারণ এই কাল মন্দ “ ( ইফিষীয় ৫ : ১৫, ১৬ পদ ) ।
নির্দোষ ছেলে - মেয়েরা পিতা-মাতার শেখানো আদর্শ অনুসরণ করে থাকে । কিন্তু এর ফল কি হতে পারে , পিতা-মাতার তা খুব কমই চিন্তা করে থাকে বলেই তারা টেলিভিশনকে এবং এর শক্তিশালী প্রভাবকে তাদের পরিবারের বিশিষ্ট স্থানে বসিয়েছে । আবার পিতা-মাতাদের নিজেদের কিছু মুহূর্তের স্বাধীনতা ভোগ করার চিন্তা করেই শিশুদের দেখাশোনাকারী হিসেবে টেলিভিশন ব্যবহার করা হয় । টেলিভিশনে যে ভীতিপ্রদ , আতঙ্কজনক ছবি দেখানো হয় , তা আসলে কোন পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় নয় ; বরং তার বদলে ঈশ্বরকে ভয় ও সম্মান করতে শেখানো উচিত ।
অনেক বিচারক , হাকিম ও শিক্ষাবিদগণ টেলিভিশনে বাজে ছবি-টবি দেখানোর জন্য বিপদ আশঙ্কা করে থাকেন । ছেলে মেয়েরা টেলিভিশনের ছবির মধ্যে দিয়ে নিজেকে কল্পনার জগতে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলে , যার ফলে এখন কোন কোন কচি ছেলে মেয়েদের স্কুলগুলোতে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে যেন তারা বাস্তব জীবন সম্পর্কে শিখতে পারে ।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলো ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে । সেই সাথে পারিবারিক জীবনও ক্রমশ নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । বিবাহ বিচ্ছেদ , ব্যভিচার এবং গর্ভপাতের মতো ঘটনা অতি সাধারন ভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে । উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে অন্য দেশের অশ্লীল ও যৌন ছবিও দেখা সম্ভব হচ্ছে। ভিডিও ক্যাসেটে এমন অনেক লজ্জা জনক ছবি ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে , যা কারও অনুপস্থিতিতে গোপনে দেখা এবং সুবিধা মত পুনরায় চালু করে দেখাও সম্ভব , অথবা ভাড়া করে এমন সব যৌন ছবি দেখাও সম্ভব হচ্ছে । চব্বিশ ঘন্টার জন্য চলা খেলাধুলার অনুষ্ঠানও মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে ।
প্রত্যেক ঈশ্বর ভয়শীল পিতা-মাতার এই বাস্তব বিপদ ঘন্টার আওয়াজ শোনা উচিত ! শয়তান টেলিভিশনের ছদ্মবেশে ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে । পারিবারিক ঐক্য এবং মঙ্গলের জন্য অতি প্রয়োজনীয় শান্তিপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ আলাপ - আলোচনা এখন কোথায় ? কোথায় সেই আত্মিক উদ্দীপনামূলক গান আর প্রার্থনা , যা পিতা-মাতা , ছেলে - মেয়েরা সবাই একসাথে উপভোগ করে ? তার বদলে কত লোকের জীবনের মহৎ ও চমৎকার আশীর্বাদ গুলো প্রাণহীন পৃথিবীর ভোগবিলাসে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে । রোমাঞ্চকর ঘটনা , নাচ - গান বা নেশায় আসক্তি কখনও কিছু হারানোর শূন্যতা পূরণ করতে পারে না এবং সত্যিকার সন্তুষ্টি দিতে পারে না , যদি একটি শান্ত পারিবারিক জীবনে ঈশ্বর প্রথম ও প্রধান স্থান না পায় । যদি কোন বাড়িতে টেলিভিশন থাকে , সেখানে যা সত্যি , উপযুক্ত , সৎ , খাঁটি , সুন্দর , ভালো ও যা সম্মান ও প্রশংসা পাবার যোগ্য , এমন স্বচ্ছ , নির্দোষ খ্রীষ্টিয় পরিবেশ রক্ষা ও জীবন - যাপন করা অবশ্যই খুব কষ্টকর । ( ফিলিপীয় ৪ : ৮ পদ ) ।
আমরা শেষ সময়ে উপস্থিত হয়েছি । ঈশ্বরের বিচার আসার আমোদ - প্রমোদ উপভোগকারী লোকদের উপর অতি সত্বর নেমে আসছে । কারণ , পাপ ও অপরাধ চারদিকে উপচে পড়ছে , অধিকাংশ লোকের ভালোবাসা মোমের মতন ঠান্ডা হয়ে গেছে ( মথি ২৪ : ১২ পদ ) । অনুগ্রহ পাবার দিন যখন শেষ হয়ে যাবে , তখন আর সুস্থ হবার , সংশোধিত হবার কোন পথ থাকবে না । একটা টেলিভিশন না থাকলে যদি ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে দ্রুত রক্ষা পাওয়া যায় এবং সেজন্য , আমাদের ছেলেমেয়েদের মন্দতা থেকে দূরে রাখার জন্য সত্যিই কিভাবে তাদের চলতে হবে তা শেখাতে বিরত থাকা উচিত নয় । “ কেউই দুই কর্তার সেবা করতে পারে না “ ( মথি ৬ : ২৪ পদ ) । “ ছেলে বা মেয়ের প্রয়োজন অনুসারে তাকে শিক্ষা দাও , সে বুড়ো হয়ে গেলেও তা থেকে সরে যাবে না “ ( হিতোপদেশ ২২ : ৬ পদ ) ।
যখন আমরা এইসব বিশৃঙ্খল ও ভীতিপ্রদ ঘটনাগুলো পড়ি , তখন কি আমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু পাবার আগ্রহ ও মহৎ আনন্দকে স্বাগত জানাতে ইচ্ছা হয় না ? “ এইজন্য তোমরা অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে বের হয়ে এসো ও আলাদা হও “ ( ২ করিন্থীয় ৬ : ১৭ পদ ) । আমাদের আনন্দ - স্ফুর্তির জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা হচ্ছে সেটাই , যা কিনা আমাদের দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে এবং জগতের মন্দ প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করবে ; যেখানে আমরা আরও পাব অন্তরের তৃপ্তি ও সন্তোষ । সত্যিকার আনন্দ কিন্তু সাময়িক উত্তেজনা ও বাসনা চরিতার্থ করার মধ্য দিয়ে পাওয়া যায় না , কিন্তু হৃদয় ও মনের শান্তির চিরস্থায়ী সম্পদই সত্যিকার আনন্দ । প্রিয় পাঠক , আসুন না আমরা ঈশ্বরের নিমন্ত্রণে সাড়া দেই; যা কিছু আমাদের জীবনে ধ্বংস ও দুর্নীতি নিয়ে আসে তা থেকে নিজেদের মুক্ত করি । আমাদের হৃদয়ে ও পরিবারে ও যা সত্যিকার ভালোবাসা , সুখ ও মূল্যবোধ এনে দেয়; আসুন না আমরা তা ধরে রাখতে সচেষ্ট হই ।