খ্রীষ্টিয়ান ও তার স্বর্গীয় আহ্বানের উপযুক্ত কাপড় - চোপড় পরার জন্য আলাদা শালীনতা পূর্ণ পোশাক রয়েছে । পৌল ফিলিপীয়দের কাছে লিখেছেন , “ সবচেয়ে বড় কথা হল , তোমরা এমনভাবে জীবন কাটাও ( জীবনের আচরণ ) যা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের উপযুক্ত “ ( ফিলিপীয় ১ : ২৭ পদ ) । একজন মানুষের পোশাক পরার ধরন একটি জানালার মতন, যা তার হৃদয়ের ভেতরটা দেখতে সাহায্য করে । এটা তার নিজের সম্পর্কে ধারণা করতে সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে এবং এও প্রকাশ করে , কে তার জীবনের প্রভু । ইতিহাস স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে , খ্রীষ্টের সত্যিকার শিষ্যরা তাদের ভদ্র পোশাক পরার জন্য সর্বদা পরিচিত।
মানুষের একটি পুরানো প্রচেষ্টা হচ্ছে সংযতভাবে , শালীনতার সাথে পোশাক পরা । সৃষ্টির পরে পাপ যখন পৃথিবীতে আসল , তখন এক ধরনের পোশাক পরার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল । ডুমুরের পাতার তৈরি যে পোশাক আদম ও হবা পরেছিল , তা যথেষ্ট ছিল না বলেই ঈশ্বর চামড়া দিয়ে বানানো পোশাক দিয়েছিলেন ( আদি পুস্তক ৩ : ৭ ও ২১ পদ ) । ঈশ্বরের ইচ্ছা এটাই যেন মানুষ তার দেহকে প্রদর্শন না করে বরং ঢেকে রাখে ।
ঈশ্বরের দেওয়া মানদন্ডে সংযতভাবে পোশাক পরাটাকে শয়তান বিভিন্নভাবে ক্রমশ দুর্বল করতে চায় । কিছু পোশাক আছে যা প্রধানত সাজগোজের জন্যই , অথবা দেহকে ঢেকে রাখার চেয়ে প্রদর্শন করাটাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে । মানুষ তার অহংকারী হৃদয়ের বাসনা পূরণের জন্য ও দেখাবার জন্যই ফ্যাশন দিয়ে পোশাক পরে । হিতোপদেশ ২১ : ৪ পদ বলছে , “ দুষ্টুদের চোখের চাহনি গর্বে ভরা এবং অন্তর অহংকারে পূর্ণ ; তাদের জীবন - বাতি পাপে ভরা ।” অন্যদিকে , অশালীন ইঙ্গিত পূর্ণ পোশাক মানুষের দৈহিক আকৃতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায় এবং কাম - লালসাপূর্ণ চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । যে পোশাক দেহের সাথে আটো - সাটো এবং অপর্যাপ্ত , তা মনোযোগ আকর্ষণ করায় ও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামোত্তেজনা জাগিয়ে তোলে এবং পরে তা অনৈতিক কাজ করায় । এটা বিশেষত ভয়ংকর , যখন অনেকে নিজেদের ভালো লোক বলে দাবি করে , কিন্তু খাঁটি ও সংযমী থাকার ব্যাপারে খুব কমই শ্রদ্ধা দেখায় । পোশাক পরার ব্যাপারেও মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করছে ।
১ করিন্থীয় ৬ : ১৯ - ২০ পদে লেখা পৌলের কথাগুলো ভদ্র পোশাক পরিধান করার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় ভিত্তি । “ তোমরা কি জান না , তোমাদের অন্তরে যিনি বাস করেন এবং যাঁকে তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছ , সেই পবিত্র আত্মার থাকবার ঘরই হল তোমাদের দেহ ? তোমরা তোমাদের নিজেদের নও ; অনেক দাম দিয়ে তোমাদের কেনা হয়েছে । তাই ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমাদের দেহ ব্যবহার কর ।” এটা লক্ষ্য করার মতো বিষয় , প্রেরিত একথা বলেন নাই যে , একজন খ্রীষ্টিয়ান তার দেহকে গৌরবান্বিত করবে ; বরং তিনি তার দেহ এবং আত্মায় ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করবেন ।
তীমথিয়ের কাছে লিখতে গিয়ে পৌল আবারও একজন খ্রীষ্টিয়ানের পোশাক সম্বন্ধে সাধারণ নীতিমালার কথা বলেছেন । তিনি আবার নির্দিষ্টভাবে স্ত্রীলোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন ; তবে এই নীতিমালা পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । তিনি বলেছেন , “ আমি চাই যেন সব জায়গায় পুরুষেরা রাগ বা ঝগড়ার মনোভাব না রেখে খাঁটি অন্তরে দুহাত তুলে প্রার্থনা করে । আমি এটাও চাই যেন স্ত্রীলোকেরা ভদ্রভাবে ও ভালো বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করে উপযুক্ত কাপড় - চোপড় পরে । তারা যেন নানা রকমে চুলের বেনী বেঁধে , সোনা ও মুক্তার গয়না পরে আর দামি কাপড় - চোপড় দিয়ে নিজেদের না সাজায় । তার বদলে যেন তারা ভাল ভাল কাজ দিয়ে নিজেদের সাজায় । যে স্ত্রী লোকেরা নিজেদের ঈশ্বর ভক্ত বলে থাকে সেই স্ত্রী লোকদের পক্ষে সেটাই হবে উপযুক্ত কাজ “ ( ১ তীমথিয় ২ : ৮ - ১০ পদ ) ।
পিতর লিখেছেন যেন স্ত্রীলোকেরা প্রলোভন থেকে দূরে থাকে , “ নানা রকম চুলের বেনী , গয়নাগাটি বা সুন্দর সুন্দর কাপড় - এই সব বাইরের সাজ - পোশাক দিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ো না , বরং যার সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাবে সে যাবে না সেই নরম ও শান্ত স্বভাব দিয়ে তোমাদের অন্তরকে সাজাও । ঈশ্বরের চোখে সেটাই বেশি দামি “ ( ১ পিতর ৩ : ৩ - ৪ পদ । এখানে “ সাজ - পোশাক পরা “ মানে শালীনতা বজায় রাখার জন্য যা পরা হয়ে থাকে তাই বুঝায় না । পোশাক পরার জন্য এক ধরনের আদব - কায়দা আছে , যা নিজ দেহকে ঢাকতে ব্যবহার করা হয় এবং যা খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য সুন্দর । আর এক রকম পোশাক আছে যা কাউকে আকর্ষণ করার জন্য যত্ন করে পছন্দ করতে হয় । এ থেকে যে ধারণা জন্মে , তা সরল ও নম্র মনা একজন খ্রীষ্টিয়ানদের ঠিক বিপরীত । হিতোপদেশ ৬ : ১৬ - ১৭ পদে আমরা পড়ি যে , গর্বে ভরা চাহনি ঈশ্বরের কাছে নিদারুণ ঘৃণার বস্তু ।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি বিবেচনা করলে যদিও এ কথা সত্যি হবে যে , সকল সমাজেই পুরুষ ও স্ত্রীলোকের পোশাক আলাদা । এই রীতিনীতি এখন ক্রমশ উঠে যাচ্ছে , যদিও শাস্ত্রের শিক্ষা অনুসারে তা অবশ্যই সঠিক নয় । পুরাতন নিয়ম থেকে আমরা এই ধরনের নির্দেশ পাই : “ কোন স্ত্রী লোক যেন পুরুষের সাজে না সাজে কিংবা কোন পুরুষ যেন স্ত্রীলোকের পোশাক না পরে । যে তা করে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাকে ঘৃণা করেন “ ( দ্বিতীয় বিবরণ ২২ : ৫ পদ ) ।
এটা অতি স্পষ্ট যে এই পৃথিবীর সাজ - পোশাক এত বেশি বাধ্যতামূলক হয় , যার কারণে তা মানুষের ব্যর্থ অহংকারী হৃদয়কে আকর্ষণ করে । কেউ নিজেকে সর্বশেষ ফ্যাশনে পরিচিত করলে তার সাধারণ বোধ - বুদ্ধি পর্যন্ত হারিয়ে যায় । যখন এই আকাঙ্ক্ষা সন্তোষজনক হয় , তখন মানুষের আত্মা মন্দ হয় এবং একরকম দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় । এটা তাদের জন্য এক দুঃখজনক অবস্থা , যারা নিজেদের খ্রীষ্টিয়ান বলে দাবি করে অথচ সাধারণ ও শালীন পোশাকের ক্ষেত্রে বাইবেলের নীতিমালা মেনে নেয় না ।
এই ব্যাপারে রোমীয় ১২ : ১ - ২ পদ যথার্থই বলেছে । “ তাহলে ভাইয়েরা , ঈশ্বরের এই সব দয়ার জন্যই আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি , তোমরা তোমাদের দেহকে জীবিত , পবিত্র ও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ হিসাবে ঈশ্বরের হাতে তুলে দাও । সেটাই হবে তোমাদের উপযুক্ত সেবা । এখনকার মন্দ জগতের চালচলনের মধ্যে তোমরা নিজেদের ডুবিয়ে দিও না , বরং ঈশ্বরকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন হয়ে ওঠো , যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে পার । ঈশ্বরের ইচ্ছা ভাল , সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং তাতে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন । “ সব দিক দিয়ে আমাদের জীবনকে প্রভুর কাছে উৎসর্গ করার জন্য এটা একটা চমৎকার নিমন্ত্রণ । যদিও এই পদগুলো শুধুমাত্র পোশাকের সম্পর্কে বলে না ; কিন্তু পরামর্শ এটাই , - যারা ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে সমর্পিত , তাদের জীবনে এক পবিত্র সৌন্দর্য এভাবেই বিচ্ছুরিত হয় । আর যখন আমাদের দেহের পোশাক সাক্ষা দেয় যে খ্রীষ্ট আমাদের জীবনে উপস্থিত আছেন , তখন আমরা আশীর্বাদ লাভ করি ।